প্রবন্ধ

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এক যুবকের অদ্ভুত আবেদন

প্রবন্ধটি শেয়ার করতে ভুলবেন না

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি, পরম করুনাময় অসীম দয়ালু।

আবু উমামা (রাঃ)হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক তরুণ যুবক রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহররাসূল (ছাঃ)! আমাকেযেনা করার অনুমতি দিন। একথা শুনে উপস্থিত লোকজন তার নিকটে এসেতাকে ধমকদিয়ে বলল, থাম! থাম! রাসূল (ছাঃ) বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। অতঃপরসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খুব নিকটে এসে বসল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমিকি তোমার মায়ের জন্য এটা (অন্যের সাথে যেনা করা) পসন্দ করবে? সেবলল, না, আল্লাহরকসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! মানুষেরা এটাতাদের মায়েদের জন্য পসন্দকরবে না। তিনি বললেন, তোমার কন্যার জন্য কি তাপসন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহরকসম! হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আমাকেআপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোন মানুষ এটাতাদের মেয়েদের জন্য পসন্দ করবে না।তিনি বললেন, তুমি কি তোমার বোনের জন্য এটা পসন্দকরবে? সে বলল, নাআল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোনব্যক্তিই এটাতাদের বোনদের জন্য পসন্দ করবে না। তিনি বললেন, তাহ’লে তোমার ফুফুরজন্য কিএটা পসন্দ করবে? সে বলল, না আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গকরুন! কোন পুরুষ এটা তাদের ফুফুদের জন্য পসন্দ করবে না।

তিনি বললেন, তবে তোমার খালার জন্য কি এটা পসন্দকরবে? সেবলল, না আল্লাহর কসম। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোন মানুষএটাতাদের খালাদের জন্য পসন্দ করবে না। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি তার ওপর হাতরেখেদো‘আ করে বললেন,

‘হে আল্লাহ! তুমি তার গুনাহ ক্ষমা করে দাও, তার হৃদয়পবিত্র করেদাও এবং তার লজ্জাস্থানকে হেফাযত করো’। এরপর ঐ যুবক আর কারো (কোন মহিলার) প্রতিদৃষ্টিপাত করেনি(মুসনাদেআহমাদ হা/২২২৬৫; সিলসিলা ছহীহা হা/৩৭০)

নিজের উপর অন্যকে প্রাধান্য দেয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত :

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একজন লোক রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এরনিকট এসে বলল, আমাকে ক্ষুধা পেয়েছে। অন্য বর্ণনায়এসেছে, আমি ক্ষুধায়কাতর। তিনি তার স্ত্রীদের নিকট (খাবারের সন্ধানে) লোক পাঠালেন।তারা বলল, ঐসত্তার কসম যিনি আপনাকে সত্য সহ পাঠিয়েছেন। আমাদের নিকট পানি ব্যতীতঅন্যকোন খাদ্য নেই। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে এরমেহমানদারী করবে? আল্লাহ তার প্রতি দয়া করবেন। তখন আনছারী ছাহাবী (আবুতালহা)বললেন, আমি করব। অতঃপর তিনি তাকে সাথে নিয়ে তার স্ত্রীর নিকট গেলেনএবং বললেন, রাসূলুল্লাহর মেহমানকে সম্মান কর। কোন খাদ্য জমা রাখবে না। সে (স্ত্রী) বলল, আল্লাহর কসম! শিশুদের জন্য রাখা খাদ্য ব্যতীত আমাদের নিকটকোন খাদ্য নেই। তিনিবললেন, তোমার খাবার প্রস্ত্তত কর, বাতি জ্বালিয়ে দাওএবং তোমার সন্তানরা যখন রাতেরখাবার খেতে চাইবে তখন তাদের ঘুম পাড়িয়েদিবে। সে খাবার প্রস্ত্তত করল, বাতিজ্বালালো এবং তার শিশুদের ঘুম পাড়িয়েদিল। অতঃপর সে দাঁড়াল এবং বাতি ঠিক করার ভাবদেখিয়ে তা নিভিয়ে দিল। অতঃপরতারা উভয়ে (অন্ধকারে) খাবার খাচ্ছে বলে তাকে প্রদর্শনকরলো। মেহমান খেলএবং তারা উভয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত্রি যাপন করল। অতঃপর সকালে সেরাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট গমন করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, গত রাতেমেহমানেরসাথে তোমাদের উভয়ের কর্মকান্ড দেখে আল্লাহ হেসেছেন বা অবাকহয়েছেন এবং নিম্নোক্তআয়াতটি নাযিল করেছেন,وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

আর তারা তাদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্থ হ’লেও।যাদেরকেঅন্তরের কার্পণ্য হ’তে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম(হাশর ৫৯/৯)(বুখারী হা/৩৭৯৪; বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/৭৮০২; সিলসিলা ছহীহা হা/৩২৭২)

মানুষকে কষ্টদেওয়া থেকে বিরত থাকার ফযীলত :

মালেক ইবনু মারছাদ তারপিতা হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আবু যার (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহররাসূল (ছাঃ)! কোন আমল মানুষকেজাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দিবে? তিনি বললেন, আল্লাহরপ্রতি ঈমান আনয়ন করা।আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী (ছাঃ)! নিশ্চয় ঈমানের সাথে কোনআমল আছে? তিনিবললেন, আল্লাহ তাকে যে সম্পদ দান করেছেন তা থেকে দান করবে। আমিবললাম, হেআল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সে যদি দরিদ্র হয়, তার নিকট দান করার মত কিছু নাথাকে, (তাহ’লে সে কি করবে)? তিনি বললেন, সে সৎ কাজের আদেশ দিবে ও অসৎ কাজহ’তেনিষেধ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে যদি অপারগ হয়, সৎ কাজেরআদেশ প্রদানও অসৎ কাজ হ’তে নিষেধ করতে অক্ষম হয়? তাহ’লে তার করণীয়সম্পর্কে আপনার মত কি? তিনিবললেন, তাহ’লে সে মূর্খের জন্য কিছু করবে। আমিবললাম, যদি সে নিজে মূর্খ হয়, কারোজন্য কিছু করতে সক্ষম না হয়। তাহ’লেকি করবে বলে আপনি মনে করেন? তিনি বললেন, অত্যাচারিতকে সাহায্য করবে। আমিবললাম, সে যদি দুর্বল হয়, অত্যাচারিতকে সাহায্যকরতে সক্ষম না হয়, তাহলেকি করবে? তখন তিনি বললেন, তুমি কি তাহ’লে তোমার ভাইয়েরজন্য কল্যাণকর কিছুকরবে না? তুমি অন্তত মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।অতঃপর আমিবললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সে ঐটা করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে? তিনিবললেন, যে মুসলিম উপরোক্ত কর্মসমূহের কোন একটি করবে, (ক্বিয়ামতের দিন) তারহাত ধরে সেগুলো তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে(তাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/১৬৫০; সিলসিলাছহীহাহ হা/২৬৬৯)

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button