প্রবন্ধ

মৃত্যুর পর যা ঘটবে

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

 মৃত্যুর পর যা ঘটবে

মৃত্যু একটি অবধারিত সত্য। মৃত্যুকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। কেউ তার আগমন ঠেকাতেও পারে না এবং কোনো দিন পারবেও না।

মৃত্যুর এই অলংঘনীয় সত্যকে পবিত্র কুরআনে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে:

كُلُّنَفْسٍذَائِقَةُالْمَوْتِ

‘প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে’ (সূরা আলে ইমরান: ৫৭)।

মৃত্যু অবধারিত সত্য; কিন্তু সে বিষয়ে অধিকাংশ মানুষই উদাসীন। আবার কেউ-কেউ ভাবেন মৃত্যু এলে বুঝি পৃথিবীর ঝক্কি-ঝামেলা সব শেষ। মৃত্যুর পর মাটিতে মিশে যাব। ব্যস, আর কোনো ঝামেলা নেই। কোনো জবাবদিহিতা নেই। আর যদি থাকেও তাহলে এ নিয়ে মাথা ঘামানোর কারণ নেই। যা হবার হবে। এটা নিছক একটি অমূলক ধারণা। নিজের প্রতি অবর্ণনীয় জুলম। কেননা মৃত্যুপরবর্তী জীবনই হলো আসল জীবন। শাশ্বত জীবন। তাই মৃত্যু ও মৃত্যুপরবর্তী জীবন সম্পর্কে উদাসীন হওয়ার অর্থ হলো নিজকে হারিয়ে ফেলা। নিজকে গভীর আঁধারে নিমজ্জিত করে দেয়া। মর্মন্তুদ ও অশেষ কষ্ট-যাতনার অগ্নিগহ্বরে স্বেচ্ছায় নিজকে নিক্ষেপ করা।

 মৃত্যুপরবর্তী জীবন সম্পর্কে আমাদেরকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। প্রস্তুতি নিতে হবে উত্তম পন্থায়। তাহলে আসুন দেখি মৃত্যুপরবর্তী-জীবন সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহ কি বলে।

কুরআন-হাদীসে মৃত্যুর পরের বিষয়গুলো অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। মানুষ যখন মারা যায় এবং তাকে কবরস্থ করা হয় তখন তাকে প্রথম যে সমস্যার মুখোমুখী হতে হয় তা হলো কবরের ফেতনা।

বুখারী ও মুসলিমে আনাস রাযি. এর বর্ণনায় এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

‘নিশ্চয় কোনো বান্দাকে যখন কবরে রাখা হয় এবং তার দোস্ত-আহবাব তাকে রেখে চলে আসে, তখন কবরস্থ ব্যক্তি তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। তিনি বলেন, ‘(এরপর) দুজন ফেরেশ্তা এসে তাকে বসায় ও জিজ্ঞাসা করে, ‘এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি বলতে’? ‘অতঃপর মুমিন ব্যক্তি বলবে, ‘আমি সাক্ষী দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল’।এরপর ঐ ব্যক্তিকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার জায়গার প্রতি তাকিয়ে দেখো। আল্লাহ তাআলা এর পরিবর্তে তোমার জন্য জান্নাতে স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘অতঃপর সে উভয়টাই দেখতে পাবে’।

ইমাম কাতাদা রহ. বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে যে, এই মুমিন কবরবাসীর জন্য তার কবরকে সত্তর গজ প্রশস্ত করে দেয়া হবে। সবুজে ভরে দেয়া হবে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য।

আর কাফির অথবা মুনাফিককে বলা হবে, ‘এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী বলতে’? তখন সে বলবে, ‘হায় আমি জানি না, লোকেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম’।এরপর তাকে বলা হবে, ‘তুমি কি জাননি? তুমি কি বুঝনি’? অতঃপর তাকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে একটি আঘাত করা হবে। তখন সে এমন এক চিৎকার দেবে, যা জিন ও ইনসান ছাড়া তার কাছের সকলেই শুনতে পাবে।

আবু আইউব আনসারী রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এমতাবস্থায় যে সূর্য তখন ডুবে গিয়েছে। অতঃপর তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি বললেন, ‘এরা ইহুদী। এদেরকে কবরে আযাব দেয়া হচ্ছে’ (বুখারী ও মুসলিম)।

এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো নামাজ পড়তেন তখন কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতেন। তাঁর উম্মতকেও তিনি এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন।

এরপর কাফির ও মুনাফিককে আযাব দেয়া হবে। আর মুমিন ও বিশ্বাসীরা থাকবে নিয়ামত-সামগ্রী পরিবেষ্টিত অবস্থায়। তাই কবরের প্রশ্নের উত্তর প্রদানের জন্য আমাদের সবাইকে যথাযথভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

এরপর আল্লাহ তাআলা সবাইকে কবর থেকে উঠাবেন। ইরশাদ হয়েছে :

أَأَوَلَمْ يَرَ الْإِنسَانُ أَنَّا خَلَقْنَاهُ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَنَسِيَ خَلْقَهُ ۖ قَالَ مَن يُحْيِي الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيمٌ [٣٦:٧٨] قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِي أَنشَأَهَا أَوَّلَ مَرَّةٍ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيمٌالَّذِي جَعَلَ لَكُم مِّنَ الشَّجَرِ الْأَخْضَرِ نَارًا فَإِذَا أَنتُم مِّنْهُ تُوقِدُونَ أَوَلَيْسَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِقَادِرٍ عَلَىٰ أَن يَخْلُقَ مِثْلَهُم ۚ بَلَىٰ وَهُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيمُ 

‘মানুষ কি দেখেনি যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে? অথচ সে (বনে যায়) একজন প্রকাশ্য কুটতর্ককারী। আর সে আমার উদ্দেশ্যে উপমা পেশ করে, অথচ সে তার নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে, ‘হাড়গুলো জরাজীর্ণ হওয়া অবস্থায় কে সেগুলো জীবিত করবে’? বল, ‘যিনি প্রথমবার এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন তিনিই সেগুলো পুনরায় জীবিত করবেন। আর তিনি সকল সৃষ্টি সম্পর্কেই সর্বজ্ঞাতা’ (সূরা ইয়াসীন: ৭৭-৭৯)।

সূরা- ইয়াসীনের শেষের এই কয়েকটি আয়াত একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়েছে। ঘটনাটি হলো, আস ইবনে ওয়ায়েল মক্কার উপত্যকা হতে একটি হাড় কুড়িয়ে স্বহস্তে ভেঙ্গে চূর্ণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল, ‘এই যে হাড়টি দেখছেন চূর্ণ-বিচূর্ণ অবস্থার পরও কি একে আল্লাহ তাআলা জীবিত করবেন’? রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘হ্যাঁ, আল্লাহ তাআলা তোমাকেও মৃত্যু দিবেন ও পুনরুজ্জীবিত করবেন এবং জাহান্নামে দাখেল করবেন।

এরপর আল্লাহ তাআলা মানুষকে হাশরের ময়দানে একত্রিত করবেন হিসাবের জন্য। ইরশাদ হয়েছেঃ

وَلَقَدْ جِئْتُمُونَا فُرَادَىٰ كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَتَرَكْتُم مَّا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَاءَ ظُهُورِكُمْ ۖ وَمَا نَرَىٰ مَعَكُمْ شُفَعَاءَكُمُ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ أَنَّهُمْ فِيكُمْ شُرَكَاءُ ۚ لَقَد تَّقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنكُم مَّا كُنتُمْ تَزْعُمُونَ

‘আর নিশ্চয় তোমরা এসেছ আমার কাছে একা একা, যেরূপ সৃষ্টি করেছি আমি তোমাদেরকে প্রথমবার এবং আমি তোমাদেরকে যা দান করেছি, তা তোমরা ছেড়ে রেখেছ তোমাদের পিঠের পেছনে। আর আমি তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারীদের দেখছি না, যাদের তোমরা মনে করেছ যে, নিশ্চয় তারা তোমাদের মধ্যে (আল্লাহর) অংশীদার। অবশ্যই ছিন্ন হয়ে গেছে তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক। আর তোমরা যা ধারণা করতে, তা তোমাদের থেকে হারিয়ে গিয়েছে’ (সূরা আল-আনআম:৯৪)।

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَنَحْشُرُهُمْيَوْمَالْقِيَامَةِعَلَىوُجُوهِهِمْعُمْيًاوَبُكْمًاوَصُمًّامَأْوَاهُمْجَهَنَّمُكُلَّمَاخَبَتْزِدْنَاهُمْسَعِيرًا

“আর আমি কিয়ামতের দিনে তাদেরকে একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব’ (সূরা আল ইসরা:৯৭)।

এই ভীতিকর ও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পাপাচারী, জালেম, মুনাফিকদের দেখা যাবে অবনত     মস্তকে, অপলক নেত্রে। আর তাদের অন্তর থাকবে শূন্য। সেদিন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না। সেদিন মানুষের হৃদয় থাকবে ওষ্ঠাগত, বিষর্ণ। কিয়ামতের সে দিনটির দৈর্ঘ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ দিনের ভয়াবহতা থেকে হিফাযত করুন।

হাদীসে আছে, আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

يَعْرَقُالْنَّاسُيَوْمَالْقِيِامَةِحَتَّىَيَذْهَبَعَرَقُهُمْفِيْالْأَرْضِسَبْعِيْنَذِرَاعا،وَيُلْجِمُهُمْحَتَّىَيَبْلُغَآَذَانَهُمْ

‘কিয়ামতের দিন মানুষ ঘামতে থাকবে। এমনকি তাদের ঘাম যমীনের সত্তর গজ নীচ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। আর তা তাদেরকে বাকরুদ্ধ করে দেবে এবং তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে’ (মুসলিম)।

আর সেদিন আল্লাহ তাআলা মানুষকে একত্রিত করবেন, তারা যা আমল করেছে তা দেখানোর জন্য। ইরশাদ হয়েছে :

يَوْمَئِذٍيَصْدُرُالنَّاسُأَشْتَاتًالِيُرَوْاأَعْمَالَهُمْ

“সেদিন মানুষ বিক্ষিপ্তভাবে বের হয়ে আসবে যাতে দেখানো যায় তাদেরকে তাদের নিজদের কৃতকর্ম’(সূরা যিলযাল, আয়াত:৬)।

হাদীসে এসেছে :

يُجَاءُبِالْكَافِرِيَوْمَالْقِيَامَةِفَيُقَالُلَهُ : أَرَأَيْتَلَوْكَانَلَكَمِلْءُالْأَرْضِذَهَبَاأَكُنْتَتَفْتَدِيَبِهِ؟فَيَقُوْلُ : نَعَمْ،فَيُقَالُ : قَدْسُئِلْتَمَاهُوَأَيْسَرُمِنْذَلِكَ – وَفِيْرِوَايَةٍ : فَقَدْسَأَلْتُكَمَاهُوَأَهْوَنُمِنْهَذَاوَأَنْتَفِيْصُلْبِآَدَمَ؛أَلَّاتُشْرِكَبِيَفَأَبَيْتَإِلَّاالشِّرْكَ

‘কাফির ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন হাযির করা হবে। তাকে বলা হবে, তোমার কী ধারণা, যদি তোমার পৃথিবী ভর্তি স্বর্ণ হত তাহলে কি তুমি তা মুক্তিপণ হিসেবে ব্যয় করতে? উত্তরে সে বলবে, ‘হ্যাঁ, করতাম। তখন তাকে বলা হবে, ‘তোমার কাছে এর চেয়েও অধিক সহজ বিষয় চাওয়া হয়েছিল। অন্য এক বর্ণনায় ‘তোমার কাছে তো এর থেকে নগণ্য একটি বিষয় আমি চেয়েছিলাম, যখন তুমি আদমের মেরুদণ্ডে ছিলে। আর তা হলো, তুমি আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। কিন্তু তুমি শিরক ছাড়া আর কিছু মানলে না’ (বুখারী ও মুসলিম)।

অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :

مَامِنْكُمْمِنْأَحَدٍإِلَّاسَيُكَلِّمُهُرَبُّهُلَيْسَبَيْنَهُوَبَيْنَهُتَرْجُمَانٌ،فَيَنْظُرُأَيْمَنَمِنْهُفَلَايَرَىَإِلَّامَاقَدَّمَمِنْعَمَلِهِ،وَيَنْظُرُأَشْأَمَمِنْهُفَلَايَرَىَإِلَّامَا   قَدَّمَ،وَيَنْظُرُبَيْنَيَدَيْهِفَلَايَرَىَإِلَّاالنَّارَتِلْقَاءَوَجْهِهِ،فَاتَّقُواالنَّارَوَلَوْبِشِقِّتَمْرَةٍ،وَلَوْبِكَلِمَةٍطَيِّبَةٍ

“তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে আল্লাহ তাআলা সরাসরি কথা বলবেন, মাঝখানে কোনো দোভাষী থাকবে না। তখন সে তার ডান দিকে তাকাবে এবং সেখানে সে তার কৃত আমল ছাড়া আর কিছুই দেখবে না। সে বাম দিকে তাকাবে, সেখানেও সে তার কৃত আমল ছাড়া অন্যকিছু দেখবে না। সে তার সামনের দিকে তাকাবে এবং আগুন ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। সুতরাং আগুন থেকে বাচোঁ যদিও শুকনো খেজুরের এক টুকরো অথবা একটি ভালো কথা ব্যয় করে হয়’ (বুখারী )।

এরপর আল্লাহ তাআলা মানুষের আমলনামা প্রকাশ করবেন। ইরশাদ হয়েছেঃ

وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَٰذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا ۚ وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا ۗ وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا

“আর আমলনামা রাখা হবে। তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখতে পাবে ভীত, তাতে যা রয়েছে তার কারণে। আর তারা বলবে, ‘হায় ধ্বংস আমাদের! কী হল এ কিতাবের! এতো ছোট-বড় কিছুই ছাড়ে না, শুধু সংরক্ষণ করে’ এবং তারা যা করেছে, তা হাযির পাবে। আর তোমার রব কারো প্রতি জুলম করেন না’ (সূরা আল কাহফ:৪৯)।

এ সময় মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। একভাগ তাদের আমলনামা পাবে ডান হাতে। আরেক ভাগ পাবে বাম হাতে। যারা ডান হাতে পাবে তারা হবে সৌভাগ্যবান। আর যারা বাম হাতে পাবে তারা হবে চির দুর্ভাগা। ইরশাদ হয়েছে :

فَأَمَّامَنْأُوتِيَكِتَابَهُبِيَمِينِهِفَيَقُولُهَاؤُمُاقْرَءُواكِتَابِيَهْ. إِنِّيظَنَنْتُأَنِّيمُلَاقٍحِسَابِيَهْ. فَهُوَفِيعِيشَةٍرَاضِيَةٍ. فِيجَنَّةٍعَالِيَةٍ . قُطُوفُهَادَانِيَةٌ . كُلُواوَاشْرَبُواهَنِيئًابِمَاأَسْلَفْتُمْفِيالْأَيَّامِالْخَالِيَةِ. وَأَمَّامَنْأُوتِيَكِتَابَهُبِشِمَالِهِفَيَقُولُيَالَيْتَنِيلَمْأُوتَكِتَابِيَهْ. وَلَمْأَدْرِمَاحِسَابِيَهْ . يَا‎لَيْتَهَاكَانَتِالْقَاضِيَةَ. مَاأَغْنَىعَنِّيمَالِيَهْ. هَلَكَعَنِّيسُلْطَانِيَهْ. خُذُوهُفَغُلُّوهُ. ثُمَّالْجَحِيمَصَلُّوهُ. ثُمَّفِيسِلْسِلَةٍذَرْعُهَاسَبْعُونَذِرَاعًافَاسْلُكُوهُ. إِنّهُكَانَلَايُؤْمِنُبِاللَّهِالْعَظِيمِ. وَلَايَحُضُّعَلَىطَعَامِالْمِسْكِينِ. فَلَيْسَلَهُالْيَوْمَهَاهُنَاحَمِيمٌ. وَلَاطَعَامٌإِلَّامِنْغِسْلِينٍ. لَايَأْكُلُهُإِلَّاالْخَاطِئُونَ

 ‘তখন যার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে সে বলবে, ‘নাও, আমার আমলনামা পড়ে দেখ’।‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, আমি আমার হিসাবের সম্মুখীন হব’।সুতরাং সে সন্তোষজনক জীবনে থাকবে। সুউচ্চ জান্নাতে, তার ফলসমূহ নিকটবর্তী থাকবে। (বলা হবে,) ‘বিগত দিনসমূহে তোমরা যা অগ্রে প্রেরণ করেছ তার বিনিময়ে তোমরা তৃপ্তি সহকারে খাও ও পান কর’।কিন্তু যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে সে বলবে, ‘হায়, আমাকে যদি আমার আমলনামা দেয়া না হত’! ‘আর যদি আমি না জানতাম আমার হিসাব’! ‘হায়, মৃত্যুই যদি আমার চূড়ান্ত ফয়সালা হত’! ‘আমার সম্পদ আমার কোন কাজেই আসল না!’ ‘আমার ক্ষমতাও আমার থেকে চলে গেল! (বলা হবে,) ‘তাকে ধর অতঃপর তাকে বেড়ি পরিয়ে দাও।’ ‘তারপর তাকে তোমরা নিক্ষেপ কর জাহান্নামে’।‘তারপর তাকে বাঁধ এমন এক শেকলে যার দৈর্ঘ্য হবে সত্তর হাত’।সে তো মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করত না, আর মিসকীনকে খাদ্যদানে উৎসাহিত করত না। অতএব আজ এখানে তার কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না। আর ক্ষতÑনিংসৃত পূঁজ ছাড়া কোন খাদ্য থাকবে না, অপরাধীরাই শুধু তা খাবে’ (সূরা আল হাক্কাহ:১৯-৩৭)।

এরপর আল্লাহ তাআলা ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করবেন। ইরশাদ হয়েছে :

وَنَضَعُالْمَوَازِينَالْقِسْطَلِيَوْمِالْقِيَامَةِفَلَاتُظْلَمُنَفْسٌشَيْئًاوَإِنْكَانَمِثْقَالَحَبَّةٍمِنْخَرْدَلٍأَتَيْنَابِهَاوَكَفَىبِنَاحَاسِبِينَ

“আর কিয়ামতের দিন আমি ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না। কারো কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়,আমি তা হাযির করব। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট’(সূরা আল আম্বিয়া:৪৮)।

হিসাবের পর বান্দাকে মুখোমুখি করা হবে পুলসিরাতের। পুলসিরাতের উপর দিয়ে সকলকেই অতিক্রম করতে হবে। নেককার বিদ্যুৎ, বাতাস ও দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে তা পার হয়ে যাবে। কেউ পার হবে সম্পূর্ণ নিরাপদভাবে। কেউ সামান্য আঁচড় খেয়ে। কেউ আহত হয়ে। আর কেউ হুমরী খেয়ে পড়ে যাবে জাহান্নামে। এমনকি সর্বশেষ ব্যক্তিকে টেনে টেনে নেয়া হবে। সাহাবী আবু সাঈদ রাযি. বলেন,‘পুলসিরাত হবে চুলের চেয়েও চিকন, তরবারির চেয়েও ধারালো।

এরপর শুরু হবে কিসাস। এ পর্যায়ে মানুষের মাঝে সর্বপ্রথম যে বিষয়ের ফয়সালা করা হবে তা হলো, রক্তপাত। আবু সাঈদ রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘মুমিনদেরকে আগুন থেকে রক্ষা করা হবে। অতঃপর তাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে একটি পুলের উপর আটকানো হবে। পৃথিবীতে তাদের পরস্পরের জুলম-অত্যাচার বিষয়ে ফয়সালা করা হবে। এরপর যখন তারা পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হয়ে যাবে, তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে’ (বুখারী ও মুসলিম)।

হে মুসলিম ভাইয়েরা! এ হলো কিয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্য। এরপরও কি আমরা নির্বোধ, গাফেল হয়ে পড়ে থাকব? এরপরও কি আমরা পাপাচারে নিমগ্ন থাকব? হে নেতা, হে বিচারক, হে সমাজপতি! এখনও কি আপনাদের তাওবা করার সময় হয়নি সকল অন্যায় অবিচার থেকে?

আখেরাতে কেবল দু’টিই ঠিকানা হবে। হয় জান্নাত, নয় জাহান্নাম। ইরশাদ হয়েছে:

وَكَذَلِكَأَوْحَيْنَاإِلَيْكَقُرْآَنًاعَرَبِيًّالِتُنْذِرَأُمَّالْقُرَىوَمَنْحَوْلَهَاوَتُنْذِرَيَوْمَالْجَمْعِلَارَيْبَفِيهِفَرِيقٌفِيالْجَنَّةِوَفَرِيقٌفِيالسَّعِيرِ.

আর এভাবেই আমি তোমার ওপর আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছি যাতে তুমি মূল জনপদ ও তার আশপাশের বাসিন্দাদেরকে সতর্ক করতে পার, আর যাতে ‘একত্রিত হওয়ার দিন’-এর ব্যাপারে সতর্ক করতে পার, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, একদল থাকবে জান্নাতে আরেক দল জ্বলন্ত আগুনে’ (সূরা আশ্শূরা:৭)।

আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

إِنَّفِيذَلِكَلَآَيَةًلِمَنْخَافَعَذَابَالْآَخِرَةِذَلِكَيَوْمٌمَجْمُوعٌلَهُالنَّاسُوَذَلِكَيَوْمٌمَشْهُودٌ. وَمَانُؤَخِّرُهُإِلَّالِأَجَلٍمَعْدُودٍ . يَوْمَيَأْتِلَاتَكَلَّمُنَفْسٌإِلَّابِإِذْنِهِفَمِنْهُمْشَقِيٌّوَسَعِيدٌ. فَأَمَّاالَّذِينَشَقُوافَفِيالنَّارِلَهُمْفِيهَازَفِيرٌوَشَهِيقٌ. خَالِدِينَفِيهَامَادَامَتِالسَّمَوَاتُوَالْأَرْضُإِلَّامَاشَاءَرَبُّكَإِنَّرَبَّكَفَعَّالٌلِمَايُرِيدُ. وَأَمَّاالَّذِينَسُعِدُوافَفِيالْجَنَّةِخَالِدِينَفِيهَامَادَامَتِالسَّمَوَاتُوَالْأَرْضُإِلَّامَاشَاءَرَبُّكَعَطَاءًغَيْرَمَجْذُوذٍ.

‘নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন তার জন্য যে আখিরাতের আযাবকে ভয় করে। সেটি এমন একটি দিন, যেদিন সকল মানুষকে সমবেত করা হবে এবং সেটি এমন এক দিন, যেদিন সবাই হাযির হবে। আর নির্দিষ্ট কিছুকালের জন্যই আমি তা বিলম্বিত করছি। যেদিন তা আসবে সেদিন তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ কথা বলবে না। অতঃপর তাদের মধ্য থেকে কেউ দুর্ভাগা, আর কেউ সৌভাগ্যবান। অতঃপর যারা হয়েছে দুর্ভাগা, তারা থাকবে আগুনে। সেখানে থাকবে তাদের চীৎকার ও আর্তনাদ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে, যতদিন পর্যন্ত আসমানসমূহ ও যমীন থাকবে, অবশ্য তোমার রব যা চান। নিশ্চয় তোমার রব তাÑই করেন যা তিনি ইচ্ছা করেন। আর যারা ভাগ্যবান হয়েছে, তারা জান্নাতে থাকবে। সেখানে তারা স্থায়ী হবে যতদিন পর্যন্ত আসমানসমূহ ও যমীন থাকবে, অবশ্য তোমার রব যা চান, অব্যাহত প্রতিদানস্বরূপ’ (সূরা হূদ:১০৩-১০৮)।

আল্লাহ তাআলা জান্নাত জাহান্নামের আলোচনায় আল কুরআনে ইরশাদ করেন:

وَسِيقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَى جَهَنَّمَ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاءُوهَا فُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِنْكُمْ يَتْلُونَ عَلَيْكُمْ آَيَاتِ رَبِّكُمْ وَيُنْذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَذَا قَالُوا بَلَى وَلَكِنْ حَقَّتْ كَلِمَةُ الْعَذَابِ عَلَى الْكَافِرِينَ. قِيلَ ادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِينَ. وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ

‘আর কাফিরদেরকে দলে দলে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে এসে পৌঁছবে তখন তার দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে কি রাসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের রবের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করত এবং এ দিনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে তোমাদেরকে সতর্ক করত’? তারা বলবে, ‘অবশ্যই এসেছিল’; কিন্তু কাফিরদের উপর আযাবের বাণী সত্যে পরিণত হল। বলা হবে, ‘তোমরা জাহান্নামের দরজাসমূহে প্রবেশ কর, তাতেই স্থায়ীভাবে থাকার জন্য। অতএব অহঙ্কারীদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট। আর যারা তাদের রবকে ভয় করেছে তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অবশেষে তারা যখন সেখানে এসে পৌঁছবে এবং তার দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে তখন জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা ভাল ছিলে। অতএব স্থায়ীভাবে থাকার জন্য এখানে প্রবেশ কর’(সূরা আয যুমার:৭১-৭৩)।

হে আল্লাহর বান্দাগণ, তাকওয়া অর্জন করুন। আর ভালোভাবে জেনে রাখুন, আল্লাহ তাআলার কাছে সম্মান ও আভিজাত্যের মাপকাঠি হচ্ছে পরহেজগারী।

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :

إِنَّأَكْرَمَكُمْعِنْدَاللَّهِأَتْقَاكُمْإِنَّاللَّهَعَلِيمٌخَبِيرٌ

“তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত’ (সূরা:আলÑহুজুরাত-১৩)।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তাকওয়ার এই মহৎ গুণ অর্জন করার তাওফীক দান করুন।

ভাইয়েরা আমার! আমরা সকলে সকল প্রকার পাপ থেকে ফিরে আসি। খালেসভাবে আল্লাহর দরবারে তাওবা করি। সৎ কাজ করার জন্য দৃঢ়প্রত্যয়ী হই। কেননা যে ব্যক্তি সৎ কাজ থেকে পিছিয়ে থাকবে, বংশমর্যাদা তাকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে না। নেক আমলই হলো আসল সম্পদ, যা আল্লাহ তাআলার কাছে সংরক্ষিত হচ্ছে। নেক আমল ছাড়া শুধু আশা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না, তাতে বরং নিজকে প্রবঞ্চিত করা হবে। তাই আসুন আমরা ঐকান্তিক হই। নেক আমল দ্বারা নিজদেরকে সমৃদ্ধ করি।

اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ وَعَنْ آلِ نَبِيِّكَ الطَّيِّبِيْنَ الطَّاهِرِيْنَ وَعَنْ أَزْوَاجِهِ أُمُّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَعَنِ الصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ وَعَنَّا مَعَهُمْ بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَعَفْوِكَ وَإِحْسَانِكَ يَا أَرْحَمَ الْرَّاحِمِيْنَ.

হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে তাকওয়াপূর্ণ জীবন অবলম্বনের তাওফীক দান করুন। মৃত্যুর জন্য যাতে যথার্থরূপে প্রস্তুতি নিতে পারি সেই তাওফীক আমাদের সকলকে দান করুন। আপনি আমাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু নসীব করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সর্বদা নেক আমল করার তাওফীক দান করুন। সিরাতুল মুস্তাকীমের উপর দৃঢ় থাকার তাওফীক দান করুন।

হে আল্লাহ!আপনি আমাদেরকে সকল প্রকার বালা-মুসীবত ও বিপদাপদ থেকে হিফাযত করুন। আমাদের অভাব দূর করে দিন। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিকর্মে বরকত দিন। আমাদেরকে হালাল কামাই করার তাওফীক দিন।

হে আল্লাহ!আপনি আমাদের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করুন এবং ঈমানের সাথে আমাদের খাতেমা বিল খাইর নসীব করুন। আপনি আমাদেরকে আখেরাতের যাবতীয় আযাব থেকে রক্ষা করুন। আমাদের আমলনামা ডান হাতে দিন এবং দুনিয়াতে আমাদেরকে হায়াতে তাইয়িবা নসীব করুন।

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button