দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম

প্রশ্ন মৃতের বাড়ীতে কুরআন খানী অনুষ্ঠান করার বিধান কি?

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

মূল: শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.)

অনুবাদক: মুহাঃ আব্দুল্লাহ আল-কাফী ও আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী
(ফাতোয়া আরকানুল থেকে)

উত্তরঃ নিঃসন্দেহেমৃত ব্যক্তির বাড়িতে কোরানখানী মাহফিল করা একটি বিদআত। কেননা ইহা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা তাঁর ছাহাবায়ে কেরামের যুগে প্রচলিতছিল না। কুরআন দ্বারা দুঃখ-চিন্তা হালকা হয়- যদি কোন ব্যক্তি উহা নীচুস্বরে তেলাওয়াত করে থাকে। জোরে চিৎকার করে বা মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পাঠকরলে এরূপ হয় না। কেননা উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করলে সমস্ত মানুষ তা শুনে থাকেএমনকি খেলা-ধুলায় লিপ্ত লোকদের কানেও তা পৌঁছে কিন্তু তারা তার প্রতিগুরুত্বারোপ করে না। এমনকি আপনি দেখবেন যারা গান্তবাদ্য শুনে তাদের কাছেও ঐকুরআনের আওয়াজ পৌঁছে। তারা গানও শুনছে কুরআনও শুনছে। ফলে তারা যেন এইকুরআনকে ঠাট্টা ও তাচ্ছিল্যের বিষয়ে পরিণত করেছে। কুরআনের অবমাননা করছে।

আরশোক-সমবেদনা জানাতে ও আগত লোকদের স্বাগত জানানোর জন্য মৃতের পরিবারের নিকটসমবেত হওয়া একটি বিদআত। অনুরূপভাবে মৃতের বাড়ীতে ভোজের আয়োজন করাও একটিবিদআত। কেননা বিষয়টি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর যুগে পরিচিতছিল না। তবে চলতে ফিরতে, মসজিদে বাজারে মৃতের পরিবারকে শোক জানানোতে কোনঅসুবিধা নেই। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে তার বাড়িতে সমবেত লোকদের জন্য খাদ্যপ্রস্তত করাকে ছাহাবায়ে কেরাম নিষিদ্ধ নিয়াহা বা ‘মৃতের জন্য বিলাপ’এরঅন্তর্ভুক্ত বলেছেন। আর মৃতের জন্য বিলাপ করা কাবীরা গুনাহ। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাপকারীনী ও বিলাপ শ্রবণকারীনীকেলা‘নত করেছেন। তিনি বলেন,
النَّائِحَةُإِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِوَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ
উচ্চৈঃস্বরেবিলাপ করে ক্রন্দনকারীনী যদি মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করে, তবে ক্বিয়ামতদিবসে এমনভাবে উত্থিত করা হবে যে, তার গায়ে আলকাতরার একটি পায়জামা পরানোহবে এবং পরানো হবে খুঁজলী যুক্ত চাদর।” (আমরা আল্লাহ্‌র কাছে নিরাপত্তাপ্রার্থনা করছি)

মুসলিমভাইদের প্রতি আমার নসীহত, তারা যেন এরকম সবধরণের বিদআত থেকে সাবধান হয়।কেননা বিদআত পরিত্যাগে তাদের যেমন কল্যাণ আছে, তেমনি উপকার আছে মৃতব্যক্তির। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
إِنَّ الْمَيِّتَ يُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ
“নিশ্চয়মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হবে তার পরিবারের লোকদের ক্রন্দন ও বিলাপেরকারণে।” এখানে ‘শাস্তি দেয়া হবে’একথার অর্থ হচ্ছে, মৃত ব্যক্তি এইক্রন্দন ও বিলাপের কারণে ব্যথিত হয় কষ্ট পায়। যদিও বিলাপকারীর শাস্তি তাকেদেয়া হবে না। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন,
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى
“একজনঅন্যজনের পাপের বোঝা বহণ করবে না।” (সূরা আনআমঃ ১৬৪) আর শাস্তি মানেইদন্ডিত হওয়া নয়। কেননা হাদীছে বলা হয়েছেঃ “সফর শাস্তির একটি অংশ।”অথচএখানে কোন দন্ড নেই; বরং এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, দুঃখ, চিন্তা, মনোকষ্টপ্রভৃতি।

সারকথামুসলিম ভাইদেরকে আমি নসীহত করি, তারা যেন শরীয়ত বহির্ভূত এই কুসংস্কারপরিত্যাগ করে যা তাদেরকে আল্লাহ্‌ থেকে দূরে সরিয়ে দিবে এবং মৃতদের শাস্তিবৃদ্ধি করবে।

প্রশ্নঃ সিজদার কারনে কপালে দাগ পড়া কি নেক লোকের কাজ ?

উত্তরঃ সিজদারকারণে কপালে দাগ পড়া নেক লোকের আলামত নয়। বরং তা হচ্ছে মুখমন্ডলের নূর, হৃদয়ের উন্মুক্ততা ও প্রশস্ততা, উত্তম চরিত্র প্রভৃতি। সিজদার কারণে কপালেযে দাগ পড়ে তা অনেক সময় চামড়া নরম হওয়ার কারণে- যারা শুধু মাত্র ফরয নামাযআদায় করে- তাদেরও হয়ে থাকে। অথচ অনেক লোক অধিকহারে এবং দীর্ঘ সিজদা করেওতাদের কপালে এ চিহ্ন দেখা যায় না।

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button