কবিরা গুনাহহালাল হারাম

মদ পানের ভয়াবহ পরিণতি

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যানি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

সংকলকঃ আব্দুল মালেক

ইবনু দায়লামী থেকে বর্ণিত, তিনি বায়তুল মুক্বাদ্দাসে বসবাস করতেন। একবার তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল আছ (রাঃ)-এর সন্ধানে মদীনায় অবস্থান করলেন। তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা (ছাহাবীগণ) বললেন, তিনি মক্কা যাত্রা করেছেন। তাঁর পিছনে পিছনে যাত্রা করে তিনি জানতে পারলেন যে, সেখান থেকে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ত্বায়েফ চলে গেছেন। এবার তার পিছনে পিছনে গিয়ে তিনি তাকে এক কৃষি খেতের মধ্যে কুরায়েশ বংশীয় এক ব্যক্তির কোমর ধরে হাঁটা অবস্থায় পেলেন। যে মদ্যপ হিসাবে পরিচিত ছিল। আমি তার সঙ্গে দেখা করে তাকে সালাম দিলাম, তিনি আমার সালামের জবাব দিলেন। তারপর বললেন, এদিনে কেন এসেছ? কোথা থেকেই বা এসেছ? আমি তাঁকে আমার খবরাদি জানালাম। তারপর তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর! আপনি কি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে মদ পান সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এবারে কুরায়শী লোকটি তার হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। তিনি বললেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের যে ব্যক্তিই মদ পান করবে তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না’ (ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/৯৩৯; মুসতাদরাকে হাকেম হা/৯৪৫; নাসাঈ হা/৫৬৬৪, ছহীহুল জামে‘ হা/৭৭১৭; মুসনাদুশ শামেয়ীন হা/৫৩১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৭০৯)।

শিক্ষা : ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য সকল প্রকার মাদকদ্রব্য হতে বিরত থাকা যরূরী।

ওযূবিহীন ছালাত আদায়ের শাস্তি

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আল্লাহর জনৈক বান্দাকে কবরে একশত কশাঘাতের আদেশ দেওয়া হ’ল। তখন সে তা কমানোর জন্য বার বার আবেদন-নিবেদন করতে থাকল। শেষ পর্যন্ত একটি কশাঘাত অবশিষ্ট থাকল। তাকে একটি মাত্র কশাঘাতই করা হ’ল। তাতেই তার কবর আগুনে ভরে গেল। তারপর যখন আঘাতের প্রভাব দূর হ’ল এবং সে হুঁশ ফিরে পেল তখন বলল, তোমরা আমাকে কেন কশাঘাত করলে? তারা বলল, তুমি এক ওয়াক্ত ছালাত বিনা ওযূতে আদায় করেছিলে আর এক মযলূম বান্দার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলে। কিন্তু তাকে তুমি সাহায্য করনি’ (শারহু মুশকিলিল আছার হা/৩১৮৫,২৬৯০; ছহীহ তারগীব ওয়া তারহীব হা/২২৩৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭৭৪)।

শিক্ষা : ওযূ ছাড়া ছালাত হয় না। তাছাড়া ওযূবিহীন ছালাত আদায় করলে পরকালে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।

অহংকারের পরিণতি

(১) ছুহায়েব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ছালাত আদায় করতেন তখন চুপিসারে (ফিসফিস করে) কিছু বলতেন। একদা তিনি ছালাত শেষে বললেন, (আমি যা বলেছি) তোমরা কি তা বুঝতে পেরেছ? আমি জনৈক নবী (আঃ)-কে স্মরণ করছিলাম। তাঁর সম্প্রদায় থেকে তাঁকে একটি সৈন্যবাহিনী দেওয়া হয়। তিনি বললেন, এমন কারা আছে যারা এদের সমকক্ষ হবে অথবা এমন কারা আছে যারা এদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে? অথবা অনুরূপ একটি কথা তিনি বললেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট এই মর্মে অহী প্রেরণ করেন যে, তোমার সম্প্রদায়ের জন্য তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি তুমি গ্রহণ কর। ১. আমি তাদের উপর তাদের শত্রুদের প্রভুত্ব চাপিয়ে দেব ২. দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দেব ৩. মরণকে বরণ করতে হবে। এতদসম্পর্কে তিনি তাঁর কওমের লোকদের নিকটে পরামর্শ চাইলেন। তারা বলল, আপনি আল্লাহর নবী! বিষয়টি নির্বাচনের ক্ষমতা আমরা আপনার উপরই ন্যস্ত করছি। তিনি তখন ছালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। আর তাঁরা (নবীরা) যখন কোন ক্ষেত্রে সন্ত্রস্ত হ’তেন তখন তাঁরা ছালাতের আশ্রয় নিতেন। তিনি বললেন, হে প্রভু! দুর্ভিক্ষ অথবা শত্রুর কোনটাই নয়। তবে মৃত্যুকেই আমরা বরণ করতে রাযী আছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর তিন দিন মৃত্যু চাপিয়ে দিলেন। ফলে তাদের মধ্যস্থিত সত্তর হাযার লোক মারা গেল। আমাকে তোমরা চুপি চুপি যে কথা বলতে শোন, তা এই-اَللَّهُمَّ  بِكَ أُقَاتِلُ وَبِكَ أُصَاوِلُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ ِبكَ-  ‘হে আল্লাহ! তোমার সহায়তায় আমরা যুদ্ধ করি, তোমার সহায়তায় আমরা হামলা করি এবং তোমার সহায়তা ছাড়া পাপ থেকে বাঁচা ও পুণ্য করার কোন শক্তি নেই’ (আহমাদ হা/১৮৯৫৭; ইবনু হিববান হা/১৯৭৫; বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান হা/৩১৮৪; ইবনু আবী শায়বা হা/৪৮০; নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/১০৪৫০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৬১)

(২) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাক্বামে ইবরাহীমে ছালাত আদায় করছিলেন। এ সময় আবু জাহল ইবনু হিশাম তাঁর নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। সে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমি কি তোমাকে এ কাজ করতে নিষেধ করিনি? সে তাঁকে ধমকাল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও তাকে কড়া ভাষায় কিছু কথা বললেন এবং তিরস্কার করলেন। তখন সে বলল, হে মুহাম্মাদ! কিসের জোরে তুমি আমাকে ভৎর্সনা করছ? আল্লাহর কসম! শোন, এই উপত্যকায় আমার জনশক্তিই বেশি। তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন, فَلْيَدْعُ نَادِيَهُ، سَنَدْعُ الزَّبَانِيَةَ  ‘সে তার জনশক্তিকে ডাকুক, আমরাও জাহান্নামের প্রহরী ফেরেশতাদের সত্বর ডাকব’ (আলাক্ব ১৭-১৮)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যদি সে তার জনশক্তিকে ডাকত, তাহ’লে তৎক্ষণাৎই তাকে আযাবের ফেরেশতারা পাকড়াও করত’ (তিরমিযী হা/৩৩৪৯; নাসাঈ, সুনানুল কুবরা হা/১১৬৮৪; বুখারী হা/৪৯৫৮ অনুরূপ অর্থে; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭৫)

শিক্ষা : অহংকার সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য।

 

 

 

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button