ফতোয়া আরকানুল ইসলাম

পবিত্রতা সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৬২টি প্রশ্নোত্তর (২য় পর্ব)

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

মূল: শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.) অনুবাদক: মুহাঃ আব্দুল্লাহ আল-কাফী ও আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী
প্রশ্নঃ (১৫৩) মাসেহ বৈধ হওয়ার সময় সীমা অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ যদি তাতে মাসেহ করে নামায আদায় করে, তবে তার নামাযের বিধান কি?
উত্তরঃ মাসেহ বৈধ হওয়ার সময় সীমা অতিবাহিত হওয়ার পর যদি ওযু ভঙ্গ হয় এবং তাতে মাসেহ করে নামায আদায় করে, তবে পুনরায় পা ধৌতসহ ওযু করতে হবে এবং পুনরায় উক্ত নামায আদায় করতে হবে। কেননা সে পা ধৌত করেনি, ফলে অপূর্ণ ওযু দ্বারা নামায আদায় করেছে। কিন্তু যদি মাসেহ করার সময় সীমা অতিবাহিত হওয়ার পর সে পবিত্র অবস্থাতেই থাকে ওযু ভঙ্গ না হয় এবং নামায আদায় করে, তবে তার নামায বিশুদ্ধ। কেননা মাসেহ করার সময় সীমা শেষ হওয়া ওযু ভঙ্গের কারণ নয়। যদিও কতিপয় বিদ্বান বলেন, সময় সীমা শেষ হলেই ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। কিন্তু এটা বিনা দীললের কথা।
অতএব মাসেহের নির্দিষ্ট সীমা শেষ হওয়ার পর কেউ যদি পবিত্র অবস্থাতেই থাকে- যদিও পূর্ণ এক দিন- তবে সে নামায পড়ে যাবে। কেননা শরঈ দীলেলের ভিত্তিতে তার পবিত্রতা বা ওযু প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং তার ওযু ভঙ্গ হয়েছে, দীলল ছাড়া একথা বলা যাবে না। আর মাসেহের সময়সীমা শেষ হলেই ওযু নষ্ট হয়ে যাবে এমন কথা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত নেই। (আল্লাহই অধিক জ্ঞান রাখেন)
প্রশ্নঃ (১৫৪) ওযু বিনষ্টের কারণগুলো কি কি?
উত্তরঃ ওযু বিনষ্টের কারণগুলো কি কি সে সম্পর্কে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ওযু বিনষ্টের কারণ হিসেবে দলীলের ভিত্তিতে যা প্রমাণিত হবে, আমরা সেটাই এখানে আলোচনা করবঃ
ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ
প্রথমতঃ পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু নির্গত হওয়া। চাই তা পেশাব, পায়খানা, বীর্য, বায়ু বা মযী[20]  বা অন্য কিছু হোক- বের হলেই তা ওযু ভঙ্গের কারণ হিসেবে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই। কিন্তু বীর্য যদি উত্তেজনার সাথে বের হয়, তবে সকলের জানা যে, তখন গোসল ওয়াজিব হবে। কিন্তু মযী বের হলে অন্ডকোষসহ পুরুষাঙ্গ ধৌত করে শুধু ওযু করলেই চলবে।

দ্বিতীয়তঃ নিদ্রা যদি এমন অধিক পরিমাণে হয়, যাতে ওযু ভঙ্গ হয়েছে কিনা অনুভুতি না থাকে, তবে তা ওযু ভঙ্গের কারণ। কিন্তু নিদ্রা অল্প পরিমাণে হলে ওযু ভঙ্গ হবে না। কেননা এ অবস্থায় ওযু ভঙ্গ হলে সাধারণতঃ অনুভব করা যায়। চাই চিৎ হয়ে শুয়ে নিদ্রা যাক বা হেলান ছাড়া বসে বা হেলান দিয়ে বসে নিদ্রা যাক। মোট কথা অন্তরের অনুভুতি উপস্থিত থাকা। কিন্তু যদি এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, যাতে কোন কিছু বুঝতে পারে না, তবে ওযু করা ওয়াজিব। কারণ হচ্ছে, নিদ্রা মূলতঃ ওযু ভঙ্গের কারণ নয়; বরং এ সময় ওযু ভঙ্গের সম্ভাবনা থাকে। অতএব অনুভুতি থাকাবস্থায় যেহেতু ওযু ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাই নিদ্রা এলেই ওযু ভঙ্গ হবে না। নিদ্রা যে মূলতঃ ওযু ভঙ্গের কারণ নয় তার দলীল হচ্ছে, অল্প নিদ্রাতে ওযু ভঙ্গ হয় না। নিদ্রা গেলেই যদি ওযু ভঙ্গ হত, তবে নিদ্রা অল্প হোক বেশী হোক ওযু ভঙ্গ হওয়ার কথা। যেমনটি পেশাব অল্প হোক বেশী হোক ওযু ভঙ্গ হবে।

তৃতীয়তঃ উটের মাংস ভক্ষণ করা। উটের গোস্ত রান্না করে হোক, কাঁচা হোক খেলেই ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা জাবের বিন সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা কি ছাগলের মাংস খেয়ে ওযু করব? তিনি বললেন, যদি চাও তো করতে পার। বলা হল, আমরা উটের মাংস খেয়ে কি ওযু করব? তিনি বললেন, “হ্যাঁ”।[21]
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ছগালের মাংস খেয়ে ওযু করার বিষয়টি মানুষের ইচ্ছাধীন রেখেছেন, তখন বুঝা যায় উটের গোস্ত খেয়ে ওযুর ব্যাপারে মানুষের কোন ইচ্ছা স্বাধীনতা নেই। অবশ্যই ওযু করতে হবে। অতএব উটের গোস্ত কাঁচা হোক বা পাকানো হোক কোন পার্থক্য নেই, গোস্ত লাল বর্ণ হোক বা অন্য বর্ণ খেলেই ওযু ভঙ্গ হবে। উটের নাড়ী-ভুঁড়ি, কলিজা, হৃতপিন্ড, চর্বি, মোটকথা উটের যে কোন অংশ ভক্ষণ করলে ওযু ভঙ্গ হবে। কেননা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য বর্ণনা করেননি। অথচ তিনি জানতেন মানুষ উটের সব অংশ থেকেই খেয়ে থাকে। উটের কোন অংশ থেকে অপর অংশের বিধানের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা অবশ্যই বর্ণনা করে দিতেন। যাতে করে মানুষ ধর্মের বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করে। তাছাড়া ইসলামী শরীয়তে আমরা এমন কোন প্রাণীর বিধান সম্পর্কে অবগত নই যে, উহার মধ্যে বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা আলাদ কোন বিধান আছে। কেননা প্রাণীকুল কোনটা হয় হালাল আবার কোনটা হয় হারাম। কোনটা খেলে ওযু আবশ্যক হবে কোনটা খেলে ওযু আবশ্যক হবে না। কিন্তু একটি প্রাণীর মধ্যে এক অংশের এই বিধান আর অন্য অংশের এই বিধান, এরকম পার্থক্য ইসলামী শরীয়তে নেই। যদিও ইহুদীদের শরীয়তে এ রকম পার্থক্য পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ্ বলেন,
وَعَلَى الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا كُلَّ ذِي ظُفُرٍ وَمِنْ الْبَقَرِ وَالْغَنَمِ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ شُحُومَهُمَا إِلَّا مَا حَمَلَتْ ظُهُورُهُمَا أَوْ الْحَوَايَا أَوْ مَا اخْتَلَطَ بِعَظْمٍ
“ইহুদীদের জন্য প্রত্যেক নখবিশিষ্ট জন্তু হারাম করেছিলাম এবং গরু ও ছাগল থেকে এতদুভয়ের চর্বি আমি তাদের জন্য হারাম করেছিলাম। কিন্তু ঐ চর্বি, যা পৃষ্ঠে কিম্বা অন্ত্রে সংযুক্ত থাকে অথবা অস্থির সাথে মিলিত থাকে, (তা বৈধ ছিল)।” (সূরা আনআম- ১৪৬)
এ জন্য বিদ্বানগণ ঐকমত্য হয়েছেন যে, শুকরের মাংস যেমন হারাম তেমনি শুকরের চর্বিও হারাম। অথচ আল্লাহ্ তা’আলা শুকরের ব্যাপারে তার মংশ হারাম হওয়ার কথাই শুধু উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেনঃ
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ
“তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শুকরের মাংস এবং গাইরুল্লাহর জন্যে যবেহকৃত প্রাণী।” (সূরা মায়েদা- ৩)
আমি জানিনা শুকরের চর্বি হারাম হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে কোন মতভেদ আছে। তাই উটের মাংস খেলে ওযু ভঙ্গ হবে সেই সাথে উটের চর্বি, নাড়ী-ভুঁড়ি প্রভৃতি খেলেও ওযু ভঙ্গ হবে।
প্রশ্নঃ (১৫৫) স্ত্রীকে স্পর্শ করলে কি ওযু ভঙ্গ হবে?
উত্তরঃ বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, স্ত্রীকে স্পর্শ করলে কখনোই ওযু ভঙ্গ হবে না। একথার দলীল হচ্ছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত, তিনি স্ত্রীকে চুম্বন করে নামায পড়তে বের হয়েছেন কিন্তু ওযু করেন নি। কেননা আসল হচ্ছে দলীল না থাকলে ওযু ভঙ্গ না হওয়া। কেননা শরঈ দলীলের ভিত্তিতে তার ওযু প্রমাণিত হয়েছে। আর যা শরঈ দলীলের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়, তা শরঈ দলীল ছাড়া নষ্ট হবে না।
যদি বলা হয়, আল্লাহ্ তো বলেছেন, أَوْ لَامَسْتُمْ النِّسَاءَ “অথবা যদি তোমরা স্ত্রীদের স্পর্শ কর।”
উত্তরে বলা হবেঃ আয়াতে স্ত্রীদের স্পর্শ করার অর্থ হচ্ছে তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়া। যেমনটি ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া আয়াতের মধ্যে তাহারাত বা পবিত্রতাকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছেঃ প্রকৃতরূপ ও বদলীরূপ এবং পবিত্রতাকেও দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ ছোট পবিত্রতা ও বড় পবিত্রতা। অনুরূপভাবে ছোট পবিত্রতার কারণ ও বড় পবিত্রতার কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমন্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়িদা- ৬)
এখানে পানি দ্বারা প্রকৃত ছোট পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। তারপর আল্লাহ্ বলেন, وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا “তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।” এখানে পানি দ্বারা প্রকৃত বড় পবিত্রতা অর্জনের কথা আলোচনা করা হয়েছে। তারপর আল্লাহ্ আবার বলেন,
وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنْ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمْ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا
“তোমরা যদি অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পেশাব-পায়খান করে অথবা তোমরা স্ত্রীদের স্পর্শ কর, তারপর পানি না পাও, তবে তোমরা তায়াম্মুম কর।”
এখানে (তায়াম্মুম কর) কথাটি পানি দ্বারা প্রকৃত পবিত্রতা অর্জন করার বদলীরূপ (পরিবর্তীত পদ্ধতি) আলোচনা করা হয়েছে। এখানে ‘তোমাদের কেউ পেশাব-পায়খান করে’ একথা দ্বারা অপবিত্রতার ছোট একটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এবং ‘স্ত্রীদের স্পর্শ কর’ কথাটি দ্বারা অপবিত্রতার বড় একটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এখন যদি ‘স্ত্রীদের স্পর্শ কর’ কথাটি দ্বারা সাধারণভাবে হাত দ্বারা স্পর্শ করার অর্থ করা হয়, তবে তো আল্লাহ্ এই আয়াতে অপবিত্রতার দু’টিই ছোট কারণ উল্লেখ করলেন এবং বড় কারণ উল্লেখ করা ছেড়ে দিলেন। অথচ তিনি এর আগে বলেছেন, “তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।” এটা কুরআনের বালাগাতের বা উচ্চাঙ্গ সাহিত্যের পরিপন্থী। তাই আয়াতে ‘স্ত্রীদের স্পর্শ কর’ কথাটি দ্বারা বুঝা যায় স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা। তাহলেই তো আয়াতে দু’টি তাহারাতের বর্ণনা পাওয়া যায়। বড় কারণ এবং ছোট কারণ। ছোট পবিত্রতা হচ্ছে, শরীরের চারটি অঙ্গের সাথে সম্পর্কিত। আর বড় পবিত্রতা সমস্ত শরীরের সাথে সম্পর্কিত। আর বদলী পবিত্রতা তায়াম্মুম শুধুমাত্র দু’টি অঙ্গের সাথে সম্পর্কিত চাই তা বড় পবিত্রতার ক্ষেত্রে হোক বা ছোট পবিত্রতার ক্ষেত্রে।
এই ভিত্তিতে আমরা বলব, স্ত্রীকে স্পর্শ করা কখনই ওযু ভঙ্গের কারণ নয়। চাই স্পর্শ উত্তেজনার সাথে হোক বা উত্তেজনার সাথে না হোক। তবে স্পর্শ করার কারণে যদি কোন কিছু নির্গত হয় তবে তার বিধান ভিন্ন। যদি বীর্য বের হয়, তবে গোসল করা ফরয আর মযী নির্গত হলে অন্ডোকোষসহ লিঙ্গ ধৌত করে ওযু করা আবশ্যক।[22]
পবিত্রতা ছাড়া কুরআন স্পর্শ করাঃ
প্রশ্নঃ (১৫৬) জনৈক শিক্ষক ছাত্রদের কুরআনের দরস প্রদান করেন। মাদ্রাসায় বা তার আশেপাশে পানি নেই। এখন তিনি কি করবেন? কেননা পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া তো কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না?
উত্তরঃ মাদ্রাসায় বা তার আশেপাশে যদি পানি না পাওয়া যায়, তবে শিক্ষক ছাত্রদের সতর্ক করবেন, তারা যেন পবিত্র না হয়ে কুরআন বহন বা স্পর্শ না করে। কেননা আমর বিন হাযম (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রয়েছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে লিখেছেন, أَنْ لا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلا طَاهِرٌ “পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না।”[23]  এখানে পবিত্রতা বলতে উদ্দেশ্য হচ্ছে ওযু বা গোসল বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে অর্জিত পবিত্রতা। যেমনটি আল্লাহ ওযুর আয়াতে উল্লেখ করেছেনঃ
مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
“আল্লাহ তোমাদেরকে কোন অসুবিধায় ফেলতে চান না, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তাঁর নে’য়ামত সমূহ পূর্ণরূপে দান করতে চান, যাতে তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।” (সূরা মায়েদা- ৬)
এখানে ‘তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান’ কথা দ্বারা বুঝা যায়, পবিত্রতা অর্জন না করলে পবিত্র হওয়া যাবে না। তাই ওযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন না করে কারো জন্য কুরআন স্পর্শ করা সমিচীন নয়। তবে কোন কোন বিদ্বান ছোটদের জন্য বিনা ওযুতে কুরআন স্পর্শ করার অনুমতি দিয়েছেন। কেননা কুরআন হাতে নেয়া তাদের জন্য খুবই দরকার। অথচ তারা ওযুর গুরুত্ব বোঝে না। কিন্তু উত্তম হচ্ছে, ছাত্রদেরকে ওযুর প্রতি উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তারা পবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করে।
প্রশ্নকারী উল্লেখ করেছেন, ‘পবিত্র ছাড়া তো কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না’ সম্ভতঃ একথা দ্বারা তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে, কুরআন স্পর্শ করার জন্য পবিত্রতা অর্জন করা ওয়াজিব। কিন্তু এক্ষেত্রে বর্ণিত আয়াতে এ দলীল পাওয়া যায় না। আল্লাহ্ বলেন, لا يَمَسُّهُ إِلا الْمُطَهَّرُونَ “পবিত্রগণ ছাড়া কেউ তা স্পর্শ করে না।” (সূরা ওয়াক্বেয়া- ৭৯) এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, কিতাবুল মাকনূন বা লুকায়িত গ্রন্থ অর্থাৎ লওহে মাহফূয। আর ‘পবিত্রগণ’ বলতে উদ্দেশ্য হচ্ছে ফেরেশতাগণ। এখানে ওযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা উদ্দেশ্য হলে এরূপ বলা হত, ‘পবিত্রতা অর্জনকারীগণ ছাড়া কেউ তা স্পর্শ করেনা’।  এখানে একথাও বলা হয়নি যে, পবিত্রতা অর্জন না করলে উহা স্পর্শ করা জায়েয নয়। কিন্তু পূর্বে যে হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে, তাই ওযুর নির্দেশ প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট।
প্রশ্নঃ (১৫৭) কি কি কারণে গোসল ফরয হয়?
উত্তরঃ গোসল ফরয হওয়ার কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ
১)     জাগ্রত বা নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত হওয়া। কিন্তু নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার অনুভব না হলেও গোসল করা ফরয। কেননা নিদ্রা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে মানুষ অনেক সময় তা বুঝতে পারে না।
২)     স্ত্রী সহবাস। সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গের সর্বনিম্ন আগাটুকু প্রবেশ করালেই গোসল ফরয হয়ে যাবে। কেননা প্রথমটির ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “পানি নির্গত হলেই পানি ঢালতে হবে।”[24]  অর্থাৎ বীর্যের পানি নির্গত হলেই গোসল করতে হবে। আর দ্বিতীয় কারণের ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِذَا جَلَسَ بَيْنَ شُعَبِهَا الْأَرْبَعِ ثُمَّ جَهَدَهَا فَقَدْ وَجَبَ الْغَسْلُ
“স্ত্রীর চার শাখার (দু’হাত দু’পায়ের) মাঝে বসে, তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হলেই গোসল ফরয হবে।” [25] যদিও বীর্যপাত না হয়। এ বিষয়টি অনেক মানুষের জানা নেই। অনেক লোক স্ত্রী সহবাসে বীর্যপাত না করলে অজ্ঞতা বশতঃ সপ্তাহ মাস কাটিয়ে দেয় গোসল করে না। এটি মারাত্মক ধরণের ভুল। এ জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শরীয়তের সীমারেখা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয।
অতএব উল্লেখিত হাদীছের ভিত্তিতে, সহবাস করে বীর্যপাত না হলেও গোসল করা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর ফরয।
৩)     নারীদের ঋতু বা নেফাস (সন্তান প্রসোবত্তোর স্রাব) হওয়া। ঋতুবতী নারীর স্রাব বন্ধ হলে, গোসলের মাধ্যমে তাকে পবিত্র হতে হবে। এই গোসলও ফরয গোসলের অন্তর্ভূক্ত। কেননা আল্লাহ্ বলেন,
يسألونَكَ عَنْ الْمَحِيْضِ قُلْ هُوَ أذىً فَاعْتَزِلُوْا النِّسَاءَ فِيْ الْمَحِيْضِ وَلاَ تَقْرَبُوْهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ، فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللهُ، إنَّ اللهَ يُحِبُّ التَّوَّابِيْنَ وَ يُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
অর্থাৎ “তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয স¤পর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না; যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমণ কর তাদের কাছে। যেভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ তওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।”  (সূরা বাক্বারা- ২২২)
তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইস্তেহাজা বিশিষ্ট নারীকে নির্দেশ দিয়েছেন, ঋতুর নির্দিষ্ট দিন সমূহ সে বিরত থাকবে তারপর গোসল করবে। নেফাস থেকে পবিত্র হওয়ার ক্ষেত্রেও অনুরূপ বিধান। তার উপরও গোসল করা ফরয।
হায়েয ও নেফাস থেকে গোসল করার পদ্ধতি নাপাকী থেকে গোসল করার পদ্ধতির অনুরূপ। তবে বিদ্বানদের মধ্যে কেউ ঋতুবতীর গোসলের সময় বরই পাতা ব্যবহার করা মুস্তাহাব বলেছেন। কেননা এতে অধিক পরিস্কার ও পবিত্র হওয়া যায়। বরই পাতার বদলে সাবান বা শ্যম্পু ব্যবহার করলেও উক্ত উদ্দেশ্য হাসিল হয়।
বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া ফরয বলে উল্লেখ করেছেন। দলীল হচ্ছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কন্যা যয়নবকে যারা গোসল দিচ্ছিলেন, তিনি তাদেরকে বললেন:
اغْسِلْنَهَا ثَلَاثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ إِنْ رَأَيْتُنَّ ذَلِكَ
“যয়নবকে তিনবার গোসল করাও, অথবা পাঁচবার অথবা সাতবার অথবা এর চাইতে অধিকবার- যদি তোমরা তা মনে কর।”[26]
তাছাড়া বিদায় হজ্জে আরাফা দিবসে জনৈক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় বাহণ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু বরণ করলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, اغْسِلُوهُ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَكَفِّنُوهُ فِي ثَوْبَيْنِ  “তোমরা তাকে পানি ও বরই পাতা দ্বারা গোসল দাও এবং পরিহিত দু’টি কাপড়েই কাফন পরাও।”[27]  বিদ্বানগণ বলেন, মৃত্যু ব্যক্তিকে গোসল করানো ফরয। কিন্তু এটা জীবিতের সাথে সম্পর্কিত। কেননা মৃত্যু বরণ করার কারণে উক্ত ব্যক্তির উপর শরীয়তের বাধ্যবাধকতা শেষ হয়ে গেছে। তাই জীবিতদের উপর ফরয হচ্ছে, তাকে গোসল করিয়ে দাফন করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রশ্নঃ (১৫৮) স্ত্রীকে স্পর্শ, আলিঙ্গন ও তাকে চুম্বন করলে কি গোসল করতে হবে?
উত্তরঃ সাধারণ স্পর্শ, শৃঙ্গার, চুম্বন, আলিঙ্গন প্রভৃতির মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর আনন্দ বিনোদন করলে তাদের উপর গোসল ফরয হবে না। তবে যদি উভয়ের থেকে বীর্যস্খলিত হয়, তবে উভয়ের উপর গোসল করা ফরয হবে। একজনের থেকে বীর্যস্খলিত হলে শুধু তার উপরই গোসল ফরয হবে। এ বিধান হচ্ছে সাধারণ শৃঙ্গার, চুম্বন, আলিঙ্গন প্রভৃতির ক্ষেত্রে। কিন্তু যদি তারা সহবাসে লিপ্ত হয়, তবে নারী-পুরুষ উভয়ের উপর গোসল ফরয হবে- যদিও তাদের কারোই বীর্যস্খলিত না হয়। কেননা আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِذَا جَلَسَ بَيْنَ شُعَبِهَا الْأَرْبَعِ ثُمَّ جَهَدَهَا فَقَدْ وَجَبَ الْغَسْلُ
“স্ত্রীর চার শাখার (দু’হাত, দা’পা) মাঝে বসে তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হলেই গোসল ফরয হবে।”[28]  মুসলিমের বর্ণনায় বলা হয়েছে, “যদিও বীর্যপাত না হয়।” এ বিষয়টি অনেক লোকের অজানা। তাদের ধারণা নারী-পুরুষ মিলিত হয়ে বীর্যপাত না হলে তাদের উপর গোসল ফরয নয়। কিন্তু এটা বিরাট ধরণের অজ্ঞতা। অতএব সহবাস হলেই সর্বাবস্থায় গোসল ফরয হবে। কিন্তু সহবাস না করে যে কোন প্রকারে আনন্দ-ফুর্তি করলে গোসল ফরয হবে না।
প্রশ্নঃ (১৫৯) নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে কাপড় ভিজা দেখলে কি করবে?
উত্তরঃ ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে কাপড় ভিজা পেলে তিনটি অবস্থা হতে পারেঃ
প্রথম অবস্থাঃ নিশ্চিত হবে যে, এই ভিজা বীর্যপাতের কারণে হয়েছে। তখন স্বপ্ন স্মরণ থাক বা ভুলে যাক গোসল করা ফরয।
দ্বিতীয় অবস্থাঃ নিশ্চিত হবে এটা বীর্য নয়। তখন গোসল করা ফরয নয়। কিন্তু ঐ ভিজা স্থান ধৌত করা ওয়াজিব। কেননা তখন উহা পেশাবের বিধানের মধ্যে শামিল হবে।
তৃতীয় অবস্থাঃ ভিজাটা কি বীর্যের কারণে না অন্য কারণে বিষয়টি অজানা। তখন ব্যাখ্যার দাবী রাখেঃ
প্রথমতঃ যদি স্মরণ থাকে যে স্বপ্নে কিছু দেখেছে, তাহলে উক্ত ভিজা বীর্য ধরে নিয়ে গোসল করবে। কেননা উম্মু সালামার হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তিনি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে প্রশ্ন করলেন, পুরুষ যা স্বপ্নে দেখে থাকে নারী যদি তা দেখে, তবে তাকেও কি গোসল করতে হবে? তিনি বললেন, “হ্যাঁ, যদি সে পানি দেখে।”[29]  এথেকে বুঝা যায় স্বপ্নে কিছু দেখে যদি পানির ভিজা পাওয়া যায়, তবে গোসল করা ফরয।
দ্বিতীয়তঃ স্বপ্নে কিছুই দেখেনি। যদি নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে সহবাসের চিন্তা মনে এসে থাকে, তবে উক্ত ভিজাকে মযীর ভিজা মনে করবে।
কিন্তু ঘুমানোর পূর্বে সহবাসের কোন চিন্তা মাথায় না আসলে কি করতে হবে সে ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছেঃ
কেউ বলেছেন, সতর্কতা বশত: গোসল করা ওয়াজিব।
কেউ বলেছেন, ওয়াজিব নয়। এটাই বিশুদ্ধ কথা। কেননা আসল হচ্ছে যিম্মামুক্ত থাকা।

প্রশ্নঃ (১৬০) নাপাক অবস্থায় কি কি বিধান প্রজোয্য?
উত্তরঃ নাপাক অবস্থায় প্রজোয্য বিধান সমূহ নিম্নরূপঃ
প্রথমঃ নাপাক ব্যক্তির জন্য নামায আদায় করা হারাম। ফরয, নফল, জানাযা সবধরণের নামায। কেননা আল্লাহ্ বলেন, وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا “তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।” (সূরা মায়িদা- ৬)
দ্বিতীয়ঃ নাপাক ব্যক্তির জন্য আল্লাহর ঘরের তওয়াফ করা হারাম। কেননা কা’বা ঘরের তওয়াফ করলে মসজিদে অবস্থান করতে হয়। আর তওয়াফকে নামায বলা হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّى تَغْتَسِلُوا
“হে ঈমানদারগণ! নেশাগ্রস্থ অবস্থায় তোমরা নামাযের নিকটে যেয়ো না, যে পর্যন্ত তোমরা কি বলছ তা বুঝতে না পার। এবং নাপাক অবস্থাতেও না, যতক্ষণ তোমরা গোসল না কর। তবে মসজিদে (অবস্থান না করে তার) ভিতর দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করতে চাইলে ভিন্ন কথা।” (সূরা নিসা- ৪৩)
তাছাড়া বিদায় হজ্জে আয়েশা (রাঃ) ঋতুবতী হয়ে পড়লে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছিলেনঃ
افْعَلِي كَمَا يَفْعَلُ الْحَاجُّ غَيْرَ أَنْ لَا تَطُوفِي بِالْبَيْتِ حَتَّى تَطْهُرِي
“হজ্জ পালনকারীগণ যা করে তুমিও তাই করে যাও, তবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর ঘর তওয়াফ করো না।” [30]
তৃতীয়ঃ কুরআন স্পর্শ করা হারাম। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
أَنْ لَا يَمَسَّ :الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ 
“ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না।”[31]
চতুর্থঃ গোসল না করে মসজিদে অবস্থান করা হারাম। কেননা আল্লাহ্ বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّى تَغْتَسِلُوا
“হে ঈমানদারগণ! নেশাগ্রস্থ অবস্থায় তোমরা নামাযের নিকটে যেয়ো না, যে পর্যন্ত তোমরা কি বলছ তা বুঝতে না পার। এবং নাপাক অবস্থাতেও না, যতক্ষণ তোমরা গোসল না কর। তবে মসজিদে (অবস্থান না করে তার) ভিতর দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করতে চাইলে ভিন্ন কথা।” (সূরা নিসা- ৪৩)
পঞ্চমঃ গোসল না করে কুরআন পাঠ করা হারাম। কেননা আলী (রাঃ) বলেন:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ عَلَى كُلِّ حَالٍ مَا لَمْ يَكُنْ جُنُبًا
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাক অবস্থা ব্যতীত সর্বাবস্থায় আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন। [32]
নাপাক ব্যক্তির জন্য এই পাঁচটি বিধান প্রজোয্য।
প্রশ্নঃ (১৬১) গোসল করার পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ গোসল করার দু’টি পদ্ধতি রয়েছেঃ
প্রথম পদ্ধতিঃ ওয়াজিব পদ্ধতি। আর তা হচ্ছে সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা। অবশ্য কুলি করা ও নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়া এর অন্তর্গত। অতএব যে কোন প্রকারে সমস্ত শরীরে পানি ঢালতে পারলে বড় নাপাকী দূর হয়ে যাবে এবং পবিত্রতা পূর্ণ হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ্ বলেন:, وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا “ “তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।” (সূরা মায়িদা- ৬)
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ পরিপূর্ণ পদ্ধতি। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেভাবে গোসল করেছেন ঠিক সেইভাবে গোসল করা। নাপাকী থেকে গোসল করতে চাইলে প্রথমে হাত দু’টি কব্জি পর্যন্ত ধৌত করবে, তারপর নাপাকী সংশ্লিষ্ট স্থান এবং লজ্জাস্থান ধৌত করে নিবে। এরপর পরিপূর্ণরূপে সঠিক পদ্ধতি অনুযায়ী ওযু করে নিবে। তারপর মাথায় তিনবার পানি ঢেলে তা ভালভাবে ভিজিয়ে নিবে। সবশেষে সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে ধুয়ে নিবে। এটাই গোসলের পরিপূর্ণ পদ্ধতি।
প্রশ্নঃ (১৬২) গোসলের সময় কুলি না করলে বা নাক না ঝাড়লে গোসল বিশুদ্ধ হবে কি?
উত্তরঃ কুলি না করলে এবং নাকে পানি দিয়ে নাক না ঝাড়লে গোসল বিশুদ্ধ হবে না। কেননা আল্লাহ্ বলেন, وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا “তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।” (সূরা মায়িদা- ৬) অর্থাৎ সমস্ত শরীর। আর মুখের ভিতর ও নাকের ভিতরের অংশ শরীরের অন্তর্গত যা পবিত্র করা ওয়াজিব। এই কারণে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযুতে কুলি করতে ও নাক ঝাড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা উহা আল্লাহর এই নির্দেশের অন্তর্গতঃ “তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ধৌত কর।” (সূরা মায়িদা- ৬) অতএব যখন কিনা ঐ দু’টি স্থান মুখমন্ডলের মধ্যে শামিল- আর মুখমন্ডল ধৌত করা ওয়াজিব বড় পবিত্রতায়, তখন নাপাকীর গোসলে কুলি করা ও নাক ঝাড়াও ওয়াজিব।
প্রশ্নঃ (১৬৩) পানি ব্যবহার করতে অপারগ হলে, কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে?
উত্তরঃ পানি না থাকার কারণে বা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকার কারণে পানি ব্যবহার করতে অপারগ হলে, তায়াম্মুম করবে। এর পদ্ধতি হচ্ছে, পবিত্র মাটিতে দু’হাত (একবার) মারবে, অতঃপর তা দ্বারা মুখমন্ডল মাসেহ করবে এবং উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে। এই নিয়ম ছোট-বড় অপ্রকাশ্য নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের সাথে সম্পর্কিত।
কিন্তু নাপাকী যদি প্রকাশ্য ও প্রত্যক্ষ্য হয়, তবে সেখানে তায়াম্মুম নেই। চাই উহা শরীরে হোক বা কাপড়ে বা মাটিতে। কেননা প্রকাশ্য নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্য হচ্ছে উক্ত মূল বস্তুটির অপসারণ করা। এখানে ইবাদতের শর্ত নেই। এই কারণে মানুষের অনিচ্ছায় যদি মূল নাপাক বস্তুটি যে কোন প্রকারে বিদূরিত হয়ে যায়, তবে স্থানটি পবিত্র হয়ে গেল। যেমন কোন নাপাক স্থানে বা কাপড়ে যদি বৃষ্টিপাত হয় এবং বৃষ্টির পানির সাথে উক্ত নাপাকী চলে যায়, তবে স্থানটি পবিত্র হয়ে গেল- যদিও এ সম্পর্কে মানুষের জানা না থাকে। কিন্তু অপ্রকাশ্য নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা তা একটি ইবাদত। তাই অবশ্যই এখানে মানুষকে নিয়ত বা দৃঢ় সংকল্প করে তা আদায় করতে হবে।
প্রশ্নঃ (১৬৪) ঠান্ডার সময় কেউ যদি নাপাক হয়, তবে কি সে তায়াম্মুম করবে?
উত্তরঃ নাপাক হলেই গোসল করা ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ বলেন, وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا “তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।” (সূরা মায়িদা- ৬) কিন্তু রাতে যদি শীত প্রচন্ড হয় এবং ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে সক্ষম না হয়, তবে সম্ভব হলে পানি গরম করে নিবে। কিন্তু পানি গরম করার ব্যবস্থা না থাকলে তায়াম্মুম করবে এবং নামায আদায় করবে। কেননা আল্লাহ্ বলেন,
وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنْ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمْ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ مِنْهُ مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
“নাপাকী থেকে তায়াম্মুম করার পতোমরা যদি অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পেশাব-পায়খানা করে অথবা স্ত্রীদের স্পর্শ করে, তারপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। স্বীয় হস্তদ্বয় ও মুখমন্ডল মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে কোন অসুবিধায় ফেলতে চান না, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তাঁর নে’য়ামত সমূহ পূর্ণরূপে দান করতে চান, যাতে তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা করতে পার।” (সূরা মায়েদা-৬)র পানি না পাওয়া পর্যন্ত সে পবিত্রই থাকবে। পানি পেয়ে গেলে গোসল করা ওয়াজিব। কেননা ছহীহ বুখারীতে ইমরান বিন হুছাইন কর্তৃক দীর্ঘ হাদীছে প্রমাণিত হয়েছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা জনৈক ব্যক্তিকে দেখলেন, মানুষের সাথে নামায আদায় না করে আলাদা হয়ে বসে আছে। তিনি প্রশ্ন করলেন, “নামায পড়লে না কেন?” লোকটি বলল, আমি নাপাক হয়ে গেছি, কিন্তু পানি নেই। তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তুমি মাটি ব্যবহার কর, সেটাই তোমার জন্য যথেষ্ট।” এরপর পানি এল, তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে পানি দিয়ে বললেন, এটা তোমার শরীরে বইয়ে দাও।[33]  এ থেকে বুঝা যায়, পানি পেলেই তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা তায়াম্মুমকারীর জন্য ওয়াজিব। চাই ছোট নাপাকীর ক্ষেত্রে হোক বা বড় নাপাকীর ক্ষেত্রে।
তায়াম্মুমকারী বড় নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন করলে পুনরায় নাপাক না হওয়া পর্যন্ত বা পানি না পাওয়া পর্যন্ত পবিত্র অবস্থাতেই থাকতে পারবে। তাই প্রত্যেক নামাযের জন্য বারবার তায়াম্মুম করবে না। অবশ্য ছোট নাপাকী হলে তা থেকে পবিত্রতার জন্য তায়াম্মুম করবে।
প্রশ্নঃ (১৬৫) যে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা হয় তাতে কি ধুলা থাকা শর্ত? আল্লাহর বাণী “তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় তা দ্বারা মুছে ফেল।” এখানে “তা দ্বারা” বলতে কি বুঝা যায় যে,তায়াম্মুম করার সময় অবশ্যই ধুলা থাকতে হবে?
উত্তরঃ প্রাধান্যযোগ্য মত হচ্ছে তায়াম্মুমের জন্য মাটিতে ধুলা লেগে থাকা শর্ত নয়। বরং মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করলেই যথেষ্ট হবে, চাই তাতে ধুলা থাক বা না থাক। অতএব মাটির উপর যদি বৃষ্টি নাযিল হয়, আর ঐ মাটিতে মানুষ হাত মেরে মুখমন্ডল ও হাত মাসেহ করে তবে যথেষ্ট হবে। যদিও মাটিতে কোন ধুলা না থাকে। কেননা আল্লাহ্ বলেন,
فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ مِنْهُ
“তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। স্বীয় হস্তদ্বয় ও মুখমন্ডল মাটি দ্বারা মুছে ফেল।” (সূরা মায়েদা- ৬)
তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর ছাহাবীগণ কখনো এমন স্থানে সফর করতেন যেখানে বালু ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যেত না। কখনো বৃষ্টিপাত হত। তারপরও তাঁরা আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক তায়াম্মুম করতেন। অতএব বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, যে কোন মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করলেই তা বিশুদ্ধ হবে। চাই সেখানে ধুলা থাক বা না থাক।
আল্লাহর বাণী: “তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় তা দ্বারা মুছে ফেল।” এখানে منه শব্দে مِنْ অব্যয়টি দ্বারা ‘কিছু সংখ্যক’ বুঝানো উদ্দেশ্য নয়। বরং কোন কাজের শুরু বুঝানো হয়েছে। এই জন্যে প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তায়াম্মুমের পদ্ধতি দেখাতে গিয়ে মাটিতে হাত মেরে তাতে ফুঁ দিয়েছেন।[34]
প্রশ্নঃ (১৬৬) মাটি না পেয়ে দেয়ালে বা বিছানায় তায়াম্মুম করলে বিশুদ্ধ হবে কি?
উত্তরঃ দেয়াল হচ্ছে পবিত্র মাটির অন্তর্ভূক্ত। দেয়াল যদি পাথর বা মাটির তৈরী ইট দ্বারা নির্মিত হয়, তবে তা দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয। কিন্তু কাঠ বা পেইন্ট প্রভৃতি দ্বারা যদি দেয়ালকে ঢেকে দেয়া হয়- আর এর উপর ধুলা জমে থাকে, তবে তা দ্বারা তায়াম্মুম করতে কোন অসুবিধা নেই। আর তা মাটিতে তায়াম্মুমের অন্তর্ভূক্ত হবে। কেননা ধুলা মাটিরই অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু উক্ত দেয়ালে যদি কোন ধুলা বা মাটি না থাকে, তবে সেখানে তায়াম্মুম করা যাবে না। কেননা সেখানে তো কোন মাটি নেই।
আর বিছানার ক্ষেত্রে কথা হচ্ছে, যদি তাতে ধুলা থাকে, তবে তা দ্বারা তায়াম্মুম চলবে অন্যথায় নয়। কেননা বিছানা মাটির অন্তর্গত নয়।
প্রশ্নঃ (১৬৭) ছোট্ট শিশুর পেশাব যদি কাপড়ে লাগে, তবে তার বিধান কি?
উত্তরঃ এই মাসআলায় বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, শিশু যদি পুরুষ হয় এবং শুধুমাত্র মাতৃদুগ্ধ তার খাদ্য হয়, তবে তার পেশাব হালকা নাপাক। এটাকে পবিত্র করার জন্য পানির ছিটা দেয়াই যথেষ্ট। অর্থাৎ হাতে পানি নিয়ে কাপড়ের উপর এমনভাবে ছিটিয়ে দিবে যাতে সম্পূর্ণ স্থানকে শামিল করে, ঘঁষতে হবে না এবং তাতে এত বেশী পরিমাণ পানি ঢালতে হবে না যে, চিপে পানি বের করতে হয়। এর কারণ হচ্ছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত হয়েছে, একদা একটি শিশু পুত্র নিয়ে এসে তাঁর কোলে রেখে দেয়া হল। সে পেশাব করে দিলে, তিনি পানি নিয়ে আসতে বললেন, অতঃপর তার উপর ছিটা দিলেন, কিন্তু তা ধৌত করলেন না। [35]
আর শিশু যদি কন্যা সন্তান হয়, তবে তার পেশাব অবশ্যই ধৌত করতে হবে। কেননা পেশাব মূলতঃ অপবিত্র। উহা ধৌত করা ওয়াজিব। কিন্তু শিশু পুত্রের পেশাব এর ব্যতীক্রম। কেননা সুন্নাতে নববীতে এর প্রমাণ বিদ্যমান। [36]
পঞ্চাশ বছর বয়স অতিক্রম হওয়ার পর নারীর ঋতু স্রাবের বিধানঃ
প্রশ্নঃ (১৬৮) জনৈক নারী পঞ্চাশ বছর বয়স অতিক্রম করেছে। কিন্তু পরিচিত নিয়মেই তার স্রাব প্রবাহিত হচ্ছে। আরেক পঞ্চাশোর্ধ নারীর স্রাব পরিচিত নিয়মে হয় না; বরং হলদে রং বা মেটে রঙ্গের পানি নির্গত হয়। এদের বিধান কি?
উত্তরঃ নির্দিষ্ট ও পরিচিত নিয়মে যে নারীর স্রাব নির্গত হচ্ছে, তার উক্ত স্রাব বিশুদ্ধ মতে হায়েয বা ঋতুস্রাব হিসেবে গণ্য হবে। কেননা ঋতুবতী হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ কোন বয়স নেই। অতএব ঋতুর নির্দিষ্ট বিধান সমূহ এই নারীর জন্য প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ- নামায, রোযা ও স্বামী সহবাস থেকে বিরত থাকা। স্রাব বন্ধ হলে ফরয গোসল করা এবং ছুটে যাওয়া ছিয়ামের কাযা আদায় করা।
আর যে নারীর হলদে রং বা মেটে রঙ্গের পানি নির্গত হচ্ছে, যদি ইহা ঋতুর নির্দিষ্ট সময়ে বের হয়ে থাকে, তবে তা হায়েয বা ঋতু হিসেবে গণ্য হবে। আর ঋতুর সময়ে না হলে তা হায়েয নয়। কিন্তু তার স্রাব যদি পরিচিত ঋতুস্রাবের মত হয় কিন্তু কখনো আগে হয় কখনো পরে, তাতে কোন অসুবিধা নেই। যখন স্রাব আসবে তখন ছালাত, ছিয়াম প্রভৃতি থেকে বিরত থাকবে আর যখন স্রাব বন্ধ হয়ে যাবে তখন গোসল করে পবিত্র হবে। এসমস্ত কথা বিশুদ্ধ মতানুযায়ী- ঋতুর জন্য বয়সের নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা নেই।
কিন্তু হাম্বলী মাযহাব মতে পঞ্চাশ বছর বয়সের উর্ধে হলে আর ঋতু নেই। যদিও কৃষ্ণ বর্ণের স্রাব নির্গত হয়। তখন সে ছালাত, ছিয়াম, প্রভৃতি যথানিয়মে চালিয়ে যাবে। রক্ত বন্ধ হলে গোসল করার দরকার নেই। কিন্তু এমতটি বিশুদ্ধ নয়।
প্রশ্নঃ (১৬৯) গর্ভবতীর রক্তস্রাব দেখা গেলে তা কি ঋতুস্রাব হিসেবে গণ্য হবে?
উত্তরঃ গর্ভবতীর হায়েয হয় না। যেমনটি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেছেন। কেননা নারীর গর্ভ তো হায়েয বন্ধ হওয়ার মাধ্যমেই জানা যায়। বিদ্বানগণ বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা নিজ হিকমতে হায়েযের রক্তকে মাতৃগর্ভে ভ্রুণের খাদ্য হিসেবে সৃষ্টি করে থাকেন। গর্ভে সন্তান এসে গেলে ঐ হায়েয বাইরে বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কোন কোন নারীর গর্ভধারণের পরও সঠিক নিয়মে হায়েয হতে থাকে। যেমনটি গর্ভধারণের পূর্বে হচ্ছিল। তাদের এই স্রাব ঋতু হিসেবে গণ্য হবে। কেননা গর্ভধারণ তার মধ্যে কোন প্রভাব ফেলেনি। ফলে ঋতু আপন গতিতে চলমান রয়েছে। অতএব তার এই স্রাব ঋতুর সবধরণের বিধানকে শামিল করবে। মোটকথা গর্ভবতী থেকে যে স্রাব নির্গত হয়, তা দু’ভাগে বিভক্তঃ
প্রথম প্রকারঃ গর্ভধারণের পূর্বে যে নিয়মে ঋতু চলছিল গর্ভের পরেও যদি সেই নিয়মে স্রাব চলতে থাকে, তবে উহা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে। কেননা এখানে গর্ভধারণ তার স্বাভাবিক স্রাবের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ফলে উহা হায়েয বা ঋতু হিসেবেই গণ্য হবে।
দ্বিতীয় প্রকারঃ আকস্মিক কোন কারণ বশতঃ স্রাব নির্গত হওয়া। দুর্ঘটনাবশত:, ভারী কোন বস্তু বহণ করা বা কোন স্থান থেকে পড়ে যাওয়া প্রভৃতি কারণে রক্ত প্রবাহিত হওয়া। তখন তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে না। বরং তা শিরা থেকে নির্গত। তাই সে নামায, রোযা প্রভৃতি থেকে বিরত থাকবে না; পবিত্র অবস্থায় যা করতো তা সবই স্বাভাবিক নিয়মে করতে থাকবে।
প্রশ্নঃ (১৭০) ঋতুর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ নির্দিষ্ট দিন বলে কি কিছু আছে?
উত্তরঃ বিশুদ্ধ মতে ঋতুর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দিন নির্দিষ্ট বলে কিছু নেই। কেননা আল্লাহ বলেনঃ
يسألونَكَ عَنْ الْمَحِيْضِ قُلْ هُوَ أذىً فَاعْتَزِلُوْا النِّسَاءَ فِيْ الْمَحِيْضِ وَلاَ تَقْرَبُوْهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ
অর্থাৎ “আর তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয স¤পর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না; যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়।” (সূরা বাক্বারা- ২২২)
এখানে স্ত্রী সহবাসের নিষিদ্ধতা নির্দিষ্ট দিনের সাথে সম্পর্কিত করা হয়নি। এর সম্পর্ক হচ্ছে অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার সাথে।

এ থেকে বুঝা যায়, বিধানটির কারণ হচ্ছে ঋতু থাকা বা না থাকা। যখনই ঋতু পাওয়া যাবে, বিধান প্রযোজ্য হবে। যখনই পবিত্র হয়ে যাবে, তার বিধান সমূহও রহিত হবে।

তাছাড়া নির্দিষ্ট দিন বেঁধে দেয়ার কোন দলীলও নেই। অথচ বিষয়টি বর্ণনা করে দেয়ার দরকার ছিল। বয়স বা দিনের নির্দিষ্টতা যদি শরীয়ত সম্মত হত, তবে তা অবশ্যই আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সুন্নাতে বর্ণিত হত।
অতএব এই ভিত্তিতে নারীদের কাছে পরিচিত স্রাব যখনই দেখা যাবে, নারী তখনই নিজেকে ঋতুবতী গণ্য করবে। এখানে কোন দিন নির্দিষ্ট করবে না। কিন্তু নারীর স্রাব যদি চলতেই থাকে বন্ধ না হয়, অথবা সামান্য সময়ের জন্য বন্ধ হয়, যেমন মাসে একদিন বা দু’দিন তবে তা ইস্তেহাযার স্রাব (বা অসুস্থতা) বলে গণ্য হবে।
প্রশ্নঃ (১৭১) কোন নারীর ঔষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে ঋতুস্রাব চালু করে নামায পরিত্যাগ করার বিধান কি?
উত্তরঃ নিজের ইচ্ছায় ঋতুস্রাব চালু করার কারণে যদি স্রাব চালু হয়ে যায় এবং নারী নামায পরিত্যাগ করে তবে উক্ত নামাযের কাযা আদায় করতে হবে না। কেননা ঋতুস্রাব যখনই দেখা যাবে, তখনই তার বিধান প্রযোজ্য হবে। অনুরূপভাবে নারী যদি ঋতুস্রাব বন্ধ করার জন্য কোন ঔষুধ গ্রহণ করে এবং তার ফলে স্রাব না আসে, তবে নামায ও ছিয়াম আদায় করবে এবং ছিয়ামের কাযা করবে না। কেননা সে তো ঋতুবতী নয়। অতএব কারণ পাওয়া গেলেই বিধান প্রযোজ্য হবে। যেমনটি আল্লাহ্ বলেছেনঃ “আর তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয স¤পর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র।” (সূরা বাকারা- ২২২) অতএব যখনই এই অপবিত্রতা পাওয়া যাবে, তার বিধান পাওয়াও যাবে। যখন অপবিত্রতা থাকবে না, কোন বিধি-বিধানও থাকবে না।
প্রশ্নঃ (১৭২) ঋতুবতী নারীর কুরআন তেলাওয়াত করা জায়েয কি?
উত্তরঃ প্রয়োজন দেখা দিলে ঋতুবতী নারীর কুরআন পাঠ করা জায়েয। যেমন সে যদি শিক্ষিকা হয়, তবে পাঠ দানের জন্য কুরআন পড়তে পারবে। অথবা ছাত্রী কুরআন শিক্ষা লাভ করার জন্য পাঠ করতে পারবে। অথবা নারী তার শিশু সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য পাঠ করবে, শিখানোর জন্য তাদের আগে আগে কুরআন পাঠ করবে। মোটকথা যখনই ঋতুবতী নারী কুরআন পাঠ করার প্রয়োজন অনুভব করবে, তখনই তার জন্য তা পাঠ করা জায়েয কোন অসুবিধা নেই। অনুরূপভাবে কুরআন পাঠ না করার কারণে যদি ভুলে যাওয়ার আশংকা করে, তবে স্মরণ রাখার জন্য তেলাওয়াত করবে- কোন অসুবিধা নেই। বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, বিনা প্রয়োজনেও তথা সাধারণ তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে ঋতুবতীর জন্য কুরআন পাঠ করা জায়েয। অবশ্য কোন কোন বিদ্বান বলেন, প্রয়োজন থাকলেও ঋতুবতী নারীর কুরআন পাঠ করা হারাম। এখানে তিনটি মত পাওয়া গেল।
কিন্তু আমার মতে যে কথা বলা উচিত তা হচ্ছে, ঋতুবতী নারী যদি কুরআন পাঠ দান বা শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন অনুভব করে বা ভুলে যাওয়ার আশংকা করে, তবে কুরআন পাঠ করতে কোন অসুবিধা নেই।
হায়েযের রক্ত না ইস্তেহাযার রক্ত সন্দেহ হলে কি করবে?
প্রশ্নঃ (১৭৩) নির্গত স্রাবের ব্যাপারে নারী যদি সন্দিহান হয় যে, এটা কি হায়েযের রক্ত না কি ইস্তেহাযার রক্ত না কি অন্য কিছুর রক্ত? এবং সে পার্থক্যও করতে পারে না। তবে সে উহা কি গণ্য করবে?
উত্তরঃ আসল কথা হচ্ছে, নারীর গর্ভ থেকে নির্গত রক্ত হায়েযেরই হয়ে থাকে। কিন্তু যখন প্রমাণিত হয়ে যাবে যে, তা ইস্তেহাযার স্রাব তখন ইস্তেহাযা হিসেবে গণ্য করবে। অন্যথায় ইস্তেহাযা কিনা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্গত রক্ত হায়েয বা ঋতু হিসেবেই গণ্য করবে।
প্রশ্নঃ (১৭৪) নামাযের সময় আরম্ভ হওয়ার পর ঋতু শুরু হলে তার বিধান কি?
উত্তরঃ নামাযের সময় প্রবেশ করার পর যদি নারীর ঋতুস্রাব শুরু হয়, যেমন উদাহরণ স্বরূপ যোহরের নামায শুরু হওয়ার আধাঘন্টা পর ঋতুস্রাব আরম্ভ হল, তবে পবিত্র হওয়ার পর এই ওয়াক্তের নামায কাযা আদায় করবে। কেননা সে পবিত্র থাকাবস্থায় তার উপর নামায আবশ্যক হয়েছিল। আল্লাহ বলেনঃ
 إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا
“নিশ্চয় নির্দিষ্ট সময়ে নামায আদায় করা মু’মিনদের উপর ফরয করা হয়েছে।” (সূরা নিসা- ১০৩)
আর ঋতু চলমান অবস্থায় যে সমস্ত নামায পরিত্যাগ করবে, তার কাযা আদায় করবে না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ একটি হাদীছে তিনি বলেনঃ
أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ
“নারী কি এমন নয় যে, সে ঋতুবতী হলে নামায পড়ে না ও রোযা রাখে না?”[37]
সমস্ত উলামায়ে কেরাম একথার উপর ঐকমত্য যে, ঋতু চলাবস্থায় ছুটে যাওয়া ছালাতের কাযা আদায় করতে হবে না।
নারী যদি এমন সময় পবিত্র হয় যখন নামাযের এক রাকাত বা ততোধিক রাকাত আদায় করা সম্ভব, তখন সে সেই নামায আদায় করে নিবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنَ الْعَصْرِ قَبْلَ أَنْ تَغْرُبَ الشَّمْسُ فَقَدْ أَدْرَكَ الْعَصْرَ
“যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আছরের এক রাকাত নামায আদায় করতে পারবে সে আছর নামায পেয়ে গেল।” [38]
যদি আছরের শেষ সময় পবিত্র হয় এবং সূর্যাস্তের জন্য এতটুকু সময় অবশিষ্ট থাকে যখন এক রাকাত নামায আদায় করা সম্ভব, অথবা সূর্যোদয় হওয়ার পূর্বে পবিত্র হয়, যখন কমপক্ষে ফজরের এক রাকাত নামায আদায় করা সম্ভব, তবে উভয় অবস্থায় তাকে গোসল করার পর আছর বা ফজরের নামায কাযা আদায় করতে হবে।
নারীর ঋতুর নির্দিষ্ট দিন বৃদ্ধি হয়ে গেলে
প্রশ্নঃ (১৭৫) জনৈক নারীর ঋতুর নির্দিষ্ট দিন ছিল ছয় দিন। অতঃপর এই দিনের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়ে গেছে। সে এখন কি করবে?
উত্তরঃ এই নারীর ঋতুর দিন ছিল ছয় দিন। কিন্তু তা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে নয় দিন বা দশ দিন বা এগার দিন হয়ে গেছে, তবে তা ঋতু হিসেবে গণ্য করে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত নামায-রোযা থেকে বিরত থাকবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঋতুর জন্য নির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করে দেননি। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয স¤পর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র।” (সূরা বাকারা- ২২২) অতএব যতক্ষণ পর্যন্ত এই স্রাব অবশিষ্ট থাকবে, নারীও নিজ অবস্থায় থেকে পবিত্র হওয়ার পর গোসল করে ছালাত-ছিয়াম আদায় করবে। পরবর্তী মাসে যদি তার স্রাবের দিন কম হয়ে যায়, তবে স্রাব বন্ধ হলেই গোসল করে পবিত্র হয়ে যাবে। যদিও আগের মাসের সমান দিন পূর্ণ না হয়।
মোটকথা নারী যতদিন ঋতু বিশিষ্ট থাকবে ততদিন সে ছালাত-ছিয়াম থেকে বিরত থাকবে। চাই ঋতুর দিন পূর্ববর্তী মাসের বরাবর হোক বা কম হোক বা বেশী হোক। স্রাব বন্ধ হয়ে পবিত্র হলেই গোসল করবে।
হায়েযের দিন সমূহ বিচ্ছিন্নভাবে হলে কি করবে?
প্রশ্নঃ (১৭৬) জনৈক নারী মাসিক থেকে পবিত্র হওয়ার পর গোসল করে নামায শুরু করেছে। এভাবে নয় দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আবার স্রাব দেখা গেছে। তিন দিন স্রাব প্রবাহমান ছিল। তখন নামায পড়েনি। তারপর পবিত্র হলে গোসল করে এগার দিন নামায আদায় করেছে। তারপর আবার তার স্বাভাবিক মাসিক শুরু হয়েছে। সে কি ঐ তিন দিনের নামায কাযা আদায় করবে? নাকি তা হায়েযের দিন হিসেবে গণ্য করবে?
উত্তরঃ নারীর গর্ভ থেকে যখনই রক্ত প্রবাহিত হবে তখনই তা ঋতু বা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে। চাই সেই ঋতুর সময় পূর্বের ঋতুর সময়ের চাইতে দীর্ঘ হোক বা কম হোক। ঋতু থেকে পবিত্র হওয়ার পাঁচ দিন বা ছয় দিন বা দশ দিন পর পুনরায় স্রাব দেখা গেছে, তবে সে পবিত্র হওয়ার অপেক্ষা করবে এবং নামায পড়বে না। কেননা এটা ঋতু। সর্বাবস্থায় এরূপই করবে। পবিত্র হওয়ার পর আবার যদি ঋতু দেখা যায়, তবে অবশ্যই নামায-রোযা থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু স্রাব যদি চলমান থাকে- সামান্য সময় ব্যতীত কখনই বন্ধ না হয়, তবে তা ইস্তেহাযা বা অসুস্থতা বলে গণ্য হবে। তখন তার নির্দিষ্ট দিন সমূহ শুধু ছালাত-ছিয়াম থেকে বিরত থাকবে।
প্রশ্নঃ (১৭৭) ঋতু শুরু হওয়ার দু’দিন পূর্বে নারীর গর্ভ থেকে যে হলুদ রংয়ের তরল পদার্থ নির্গত হয় তার বিধান কি?
উত্তরঃ হলুদ রংয়ের এই তরল পদার্থ যদি ঋতুর সময় হওয়ার পূর্বে নির্গত হয়, তবে তা কিছু নয়। কেননা উম্মে আত্বীয়্যা (রাঃ) বলেন,
كُنَّا لَا نَعُدُّ الْكُدْرَةَ وَالصُّفْرَةَ شَيْئًا
“আমরা হলুদ রং ও মেটে রংয়ের তরল পদার্থ বের হলে তা কোন কিছুই গণ্য করতাম না।”[39]  (বুখারী) আবু দাঊদের বর্ণনায় এসেছে, উম্মে আত্বীয়্যা (রাঃ) বলেন,
كُنَّا لَا نَعُدُّ الْكُدْرَةَ وَالصُّفْرَةَ بَعْدَ الطُّهْرِ شَيْئًا
“পবিত্র হওয়ার পর হলুদ রং ও মেটে রংয়ের তরল পদার্থ বের হলে আমরা তাকে কোন কিছুই গণ্য করতাম না।”[40]
ঋতুর পূর্বের এই হলুদ রংয়ের তরল পদার্থ যদি ঋতু বের হওয়ার সাথে সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে তা কোন কিছু নয়। কিন্তু নারী যদি উহা ঋতুর সূচনা স্বরূপ মনে করে, তবে তা ঋতু হিসেবে গণ্য করবে এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।
প্রশ্নঃ (১৭৮) পবিত্র হওয়ার পর হলুদ রং ও মেটে রংয়ের তরল পদার্থ বের হওয়ার বিধান কি?
উত্তরঃ ঋতুর ক্ষেত্রে নারীদের সমস্যা সাগরতুল্য যার কোন কুল কিনারা নেই। এর অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, গর্ভ বা মাসিক নিরোধক ঔষধ ব্যবহার করা। পূর্বে মানুষ এত ধরণের সমস্যা সম্পর্কে অবগত ছিল না। সন্দেহ নেই সৃষ্টি লগ্ন থেকে নারীর নানান সমস্যা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এর আধিক্য এত বেশী যে মানুষ তার সমাধানের ক্ষেত্রে হয়রান হয়ে যায়; যা দুঃখজনক বিষয়।
তবে মূলনীতি হচ্ছে, নারী যদি নিশ্চিতভাবে ঋতু থেকে পবিত্রতা দেখতে পায়, যেমন নারীদের কাছে পরিচিত সাদা পানি বের হওয়া, বা হলুদ বা মেটে রং বের হওয়া বা ভিজা পাওয়া এগুলো সবই হায়েয বা ঋতু নয়। এগুলো নামায বা ছিয়াম থেকে বাধা দিবে না। স্বামী সহবাসে বাধা থাকবে না। কেননা এটা হায়েয নয়। উম্মু আতিয়্যা (রাঃ) বলেন, “পবিত্র হওয়ার পর হলুদ রং ও মেটে রংয়ের তরল পদার্থ বের হলে, আমরা তা কোন কিছুই গণ্য করতাম না।” [41] এর সনদ ছহীহ।
এই ভিত্তিতে, নিশ্চিতভাবে পবিত্র হওয়ার পর এ ধরণের যা কিছুই ঘটুক, তাতে নারীর কোন অসুবিধা নেই। ছালাত-ছিয়াম ও স্বামী সহবাসে কোন বাধা নেই। কিন্তু পবিত্রতা না দেখা পর্যন্ত তাড়াহুড়া করবে না। কেননা কোন কোন নারী রক্ত বের হওয়াতে কিছুটা শুস্কতা দেখলেই পবিত্রতার চিহ্ন না দেখেই তাড়াহুড়া করে গোসল করে নেয়। এই জন্য মহিলা ছাহাবীগণ উম্মুল মু’মেনীন আয়েশা (রাঃ)কে দেখানোর জন্য তুলা নিয়ে আসতেন যাতে পীত রংয়ের তরল পদার্থ লেগে থাকতো। তখন তিনি তাদেরকে বলতেন, “সাদা পানি নির্গত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাড়াহুড়া করবে না।” [42]
প্রশ্নঃ (১৭৯) ঋতু বন্ধ করার জন্য ঔষধ (ট্যাবলেট) ব্যবহার করার বিধান কি?
উত্তরঃ ঋতু বন্ধ করার জন্য ঔষধ (ট্যাবলেট) ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকলে, তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে তাতে স্বামীর অনুমতি থাকতে হবে। কিন্তু এযাবত আমি যা জেনেছি তাতে এ সমস্ত ঔষধ নারীর জন্য ক্ষতিকারক। একথা সবার জানা যে, মাসিকের রক্ত প্রবাহিত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। আর সময় মত স্বাভাবিক বিষয়ের গতিতে বাধা দিলে সেখানে অবশ্যই ক্ষতির আশংকা থাকে। নারীর শরীরে তার ক্ষতিকর প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া ইহা ব্যবহার করলে অনেক সময় নারীর স্বাভাবিক মাসিক বাধাগ্রস্থ হয় এবং সে পেরেশানী ও সন্দেহের মধ্যে পতিত হয়। নামায-রোযা ও স্বামীর সাথে সহবাসের ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখিন হয়।
এ জন্য আমি বলিনা যে এটা হারাম। কিন্তু নারীর ক্ষতির দিক চিন্তা করে বলি, এটা ব্যবহার করা উচিত নয়। আমার মতে এ পদক্ষেপ পসন্দনীয় নয়।
আরো বলি, আল্লাহ নারীর জন্য যা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তাতেই তার সন্তুষ্ট থাকা উচিত। বিদায় হজ্জে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মুল মু’মেনীন আয়েশা (রাঃ)এর ঘরে গিয়ে দেখেন তিনি কাঁদছেন। তখন আয়েশা (রাঃ) ওমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন।
فَقَالَ مَا يُبْكِيكِ قُلْتُ لَوَدِدْتُ وَاللَّهِ أَنِّي لَمْ أَحُجَّ الْعَامَ قَالَ لَعَلَّكِ نُفِسْتِ قُلْتُ نَعَمْ قَالَ فَإِنَّ ذَلِكِ شَيْءٌ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ
তিনি তাঁকে বললেন, “কি হয়েছে তোমার, কাঁদছো কেন? আয়েশা (রাঃ) বললেন, আমি বললাম, আল্লাহর শপথ এ বছর আমি হজ্জ না করলেই ভাল হত। তিনি বললেন, সম্ভবতঃ তুমি ঋতুবতী হয়ে গেছো? আমি বললাম, হ্যাঁ। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা এমন এক বিষয় যা আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের মেয়েদের জন্য লিখে দিয়েছেন।[43]
(সুতরাং দুঃখ করার কিছু নেই।)  অতএব নারীর উচিত হচ্ছে, এ সময় ধৈর্য ধারণ করা। ঋতুর কারণে ছালাত-ছিয়াম করতে না পারলে তো আল্লাহর যিকিরের দরজা উম্মুক্ত রয়েছে। তাসবীহ-তাহলীল করবে, দান-সাদকা করবে, মানুষের সাথে সদাচরণ করবে, কথা-কাজে মানুষের উপকার করার চেষ্টা করবে, ইত্যাদি কাজ তো সুন্দর ও অত্যাধিক ফযীলতপূর্ণ আমল।
প্রশ্নঃ (১৮০) চল্লিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও নেফাসের স্রাব চলতে থাকলে কি করবে?
উত্তরঃ কোন পরিবর্তন ছাড়াই যদি নেফাস বিশিষ্ট নারীর স্রাব চল্লিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও চলতে থাকে- যদি চল্লিশ দিনের পরের স্রাব ঋতুস্রাবের সময়ে হয়ে থাকে, তবে তা হায়েয বা ঋতু স্রাব হিসেবে গণ্য করবে। কিন্তু পূর্ববর্তী স্বাভাবিক ঋতু স্রাবের সময়ে না হয়, তবে সে সম্পর্কে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
একদল বিদ্বান বলেন, চল্লিশ দিন পূর্ণ হলেই গোসল করে পবিত্র হয়ে যাবে এবং স্বাভাবিক নিয়মে ছালাত-ছিয়াম আদায় করবে। আর প্রবাহিত রক্ত ইস্তেহাযা বা অসুস্থতা গণ্য করবে।
আরেকদল বিদ্বান বলেন, সে অপেক্ষা করবে এবং ষাট দিন পূর্ণ করবে। কেননা ষাট দিন পর্যন্ত নেফাস হয়েছে, এমন অনেক নারীও পাওয়া গেছে। এটা বাস্তব বিষয়। কেননা প্রকৃত পক্ষে কোন কোন নারীর ষাট দিন পর্যন্তই নেফাস হয়েছে। অতএব এই ভিত্তিতে ষাট দিন পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এরপর স্বাভাবিক ঋতু স্রাবের দিকে ফিরে যাবে। আর সেই মাসিকের সময় অপেক্ষা করে পবিত্র হলে গোসল করে নামায-রোযা আদায় করবে। এরপরও যদি স্রাব চলতেই থাকে তখন উহা ইস্তেহাযা হিসেবে গণ্য করবে।[44]
প্রশ্নঃ (১৮১) নেফাসের চল্লিশ দিন শেষ হওয়ার আগেই পবিত্র হয়ে গেলে বা চল্লিশ দিনের পর পূণরায় স্রাব দেখা গেলে কি করবে?
উত্তরঃ নেফাস বিশিষ্ট স্ত্রীর সাথে সহবাস করা স্বামীর জন্য জায়েয নয়। যদি চল্লিশ দিনের মধ্যে সে পবিত্র হয়ে যায়, তবে গোসল করে নামায আদায় করা তার জন্য ওয়াজিব এবং নামাযও বিশুদ্ধ। এ অবস্থায় স্বামী সহবাসও তার জন্য জায়েয। কেননা আল্লাহ বলেন,
(يسألونَكَ عَنْ الْمَحِيْضِ قُلْ هُوَ أذىً فَاعْتَزِلُوْا النِّسَاءَ فِيْ الْمَحِيْضِ وَلاَ تَقْرَبُوْهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ)
অর্থাৎ- “আর তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয স¤পর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না; যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়।” (সূরা বাক্বারা- ২২২)
যতক্ষণ অপবিত্রতা তথা রক্ত বিদ্যমান থাকবে ততক্ষণ স্বামীর সাথে সহবাস জায়েয হবে না। পবিত্র হয়ে গেলেই সহবাস জায়েয হবে। যেমনটি নামায আদায় করাও তার জন্য ওয়াজিব। চল্লিশ দিনের পূর্বে পবিত্র হলে, নেফাস অবস্থার যাবতীয় নিষিদ্ধতা শেষ হয়ে যাবে। তবে সহবাসের ক্ষেত্রে কিছুটা ধৈর্যাবলম্বন করা উচিত। কেননা সহবাসের ফলে পুনরায় রক্ত চালু হয়ে যেতে পারে।
চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার পর এবং পবিত্র হওয়ার পর যদি আবার রক্ত দেখা যায়, তবে উহা মাসিকের রক্ত হিসেবে গণ্য করবে। নেফাসের রক্ত নয়। মাসিকের রক্ত নারীদের কাছে পরিচিত। যখনই উহা অনুভব করবে মনে করবে উহা ঋতুস্রাব। এই রক্ত যদি প্রবাহমান থাকে এবং সামান্য সময় ব্যতীত কখনই বন্ধ হয় না, তবে উহা ইস্তেহাযা হিসেবে গণ্য হবে। তখন ঋতুর নির্দিষ্ট দিন সমূহ অপেক্ষা করবে এবং অবশিষ্ট দিন সমূহ পবিত্র হিসেবে গণ্য করবে এবং গোসল করে নামায আদায় করবে। (আল্লাহই অধিক জ্ঞাত)
অকাল গর্ভপাত হলে কি করবে?
প্রশ্নঃ (১৮২) জনৈক নারীর তৃতীয় মাসেই গর্ভপাত হয়ে গেছে। সে কি নামায আদায় করবে, না নামায পরিত্যাগ করবে?
উত্তরঃ বিদ্বানদের নিকট পরিচিত কথা হচ্ছে, নারীর গর্ভ যদি তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পর পড়ে যায়, তবে সে নামায পড়বে না। কেননা নারীর গর্ভস্থ ভ্রুণে মানুষের আকৃতি সৃষ্টি হয়ে গেছে। তখন তা নেফাস হিসেবে গণ্য হবে। অতএব সে নামায থেকে বিরত থাকবে।
বিদ্বানগণ বলেন, মাতৃগর্ভে ভ্রুণের বয়স ৮১ (একাশি) দিন অতিবাহিত হলে মানুষের আকৃতি ধারণ করে। এ সময়টি তো তিন মাসের অনেক কম। যদি নিশ্চিত হয় যে, তিন মাস বয়সের ভ্রুণ পতিত হয়ে গেছে, তবে নির্গত রক্ত নেফাসের রক্ত বলেই গণ্য হবে। কিন্তু এই গর্ভপাত যদি আশি দিনের কমে হয়, তবে নির্গত রক্ত নষ্ট রক্ত বলে গণ্য হবে। আর সে কারণে নামায প্রভৃতি পরিত্যাগ করবে না।
প্রশ্নকারী এই নারীর উপর আবশ্যক হচ্ছে, স্মরণ করার চেষ্টা করবে ৮০ দিনের কম বয়সে যদি গর্ভপাত হয়ে থাকে এবং সে জন্য নামায পরিত্যাগ করে থাকে, তবে পরিত্যাক্ত নামাযের কাযা আদায় করবে। নামায কত ওয়াক্ত ছুটেছে তা নিশ্চিতভাবে স্মরণ করতে না পারলে অনুমানের ভিত্তিতে কাযা আদায় করবে।
ইস্তেহাযা হলে নারী কি করবে?
প্রশ্নঃ (১৮৩) অসুস্থতার কারণে যদি কোন নারীর রক্তস্রাব নির্গত হতেই থাকে, তবে কিভাবে সে ছালাত ও ছিয়াম আদায় করবে?
উত্তরঃ এই নারীর অসুখ শুরু হওয়ার পূর্বে তথা গত মাসে তার ঋতুর যে দিন তারিখ নির্দিষ্ট ছিল, সেই নির্দিষ্ট দিন সমূহে সে নিজেকে ঋতুবতী হিসেবে গণ্য করে ছালাত-ছিয়াম প্রভৃতি থেকে বিরত থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ বিগত মাসগুলোর প্রথম দিকে তার ছয়দিন ঋতু ছিল, তারপর এক সময় তার অসুখ শুরু হয়েছে, এক্ষেত্রে সে প্রত্যেক মাসের প্রথম দিকে ছয় দিন অপেক্ষা করবে এবং ছালাত ছিয়াম থেকে বিরত থাকবে। এ দিন সমূহ শেষ হলেই গোসল করে ছালাত-ছিয়াম আদায় করবে।
এ নারী বা তার মত নারীদের নামাযের পদ্ধতি হচ্ছে,
ক) ফরয নামাযের সময় হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গরূপে লজ্জাস্থান ধৌত করবে।
খ) তারপর সেখানে প্যাড বা পট্টি জাতীয় কোন কিছু বেঁধে দিবে,
গ) এরপর ওযু করবে এবং নামায আদায় করবে।
নামাযের সময় উপস্থিত হওয়ার পূর্বে এরূপ ওযু ইত্যাদি কাজ করবে না। ফরয নামাযের সময় ব্যতীত অন্য সময় নফল নামায পড়তে চাইলেও এভাবে ওযু ইত্যাদি করবে।
এ অবস্থায় যেহেতু বারবার এতকাজ করা তার জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তাই দু’নামাযকে একত্রিত করা জায়েয। যোহরের সাথে আছরের নামায আদায় করে নিবে বা আছরের সাথে যোহরের নামাযকে আদায় করবে। এবং মাগরিবের সাথে এশার নামায আদায় করবে অথবা এশার সময় মাগরিব ও এশার নামায আদায় করবে। যাতে করে তার একবারের পরিশ্রম দু’নামায যোহর ও আছরের জন্য যথেষ্ট হয় এবং দ্বিতীয়বারের পরিশ্রম মাগরিব ও এশার জন্য যথেষ্ট হয়। আর একবার ফজর নামাযের জন্য। অর্থাৎ- পাঁচবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য লজ্জাস্থান ধৌত করা, পট্টি বাঁধা, ওযু করা প্রভৃতি কষ্টকর বিষয়। তাই এর পরিবর্তে তিনবারেই একাজ আদায় হয়ে যাবে। কষ্টও অনেক লাঘব হবে। (আল্লাহই তাওফীক দাতা ও তিনিই অধিক জ্ঞাত আছেন)
উৎসঃ ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম
রেফারেন্স
[20] উত্তেজনার কারণে লিঙ্গের আগায় আঠালো জাতীয় যে তরল পদার্থ বের হয়, তাকে আরবীতে মযী বলে।
[21] মুসলিম, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ উটের মাংস খেয়ে ওযু করা।
[22] তাছাড়া বিষয়টির সমাধান নবী  এর কর্ম থেকে ছহীহ্ হাদীছে পাওয়া যায়ঃ

عن عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُقَبِّلُ بَعْضَ أَزْوَاجِهِ ثُمَّ يُصَلِّي وَلَا يَتَوَضَّأُ  

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী  কখনো তাঁর কোন স্ত্রীকে চুম্বন করতেন অতঃপর নামায পড়তেন কিন্তু ওযু করতেন না।” (তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ্, আহমাদ)
[23]  দারেমী, অধ্যায়ঃ তালাক, অনুচ্ছেদ নং৩ হা/ ২১৬৬। মুআত্বা মালেক অধ্যায়ঃ নামাযের জন্য আহবান হা/৪১৯।
[24] মুসলিম, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ পানি নির্গত হলেই পানি ঢালা। হা/ ৩৪৩।
[25] বুখারী, অধ্যায়ঃ গোসল, অনুচ্ছেদঃ উভয় লিঙ্গ মিলিত হলে করণীয়, হা/ ২৯১। মুসলিম, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ পানি ঢালার সম্পর্ক পানি নির্গত হওয়ার সাথে। হা/ ৩৪৮।
[26] বুখারী, অধ্যায়ঃ জানাযা, অনুচ্ছেদঃ মৃতকে পানি ও বরই পাতা দিয়ে গোসল দেয়া ও ওযু করানো। হা/১২৫৩। মুসলিম, অধ্যায়ঃ জানাযা, অনুচ্ছেদঃ মৃতকে গোসল দেয়া, হা/৯৩৯।
[27] বুখারী, অধ্যায়ঃ জানাযা, অনুচ্ছেদঃ ইহরামকারী মৃত ব্যক্তিকে কিভাবে কাফন পরাতে হয়। হা/ ১২৬৭। মুসলিম, অধ্যায়ঃ হজ্জ, অনুচ্ছেদঃ ইহরামকারী মৃত্যুবরণ করলে কি করতে হবে। হা/১২০৬।
[28] বুখারী, অধ্যায়ঃ গোসল, অনুচ্ছেদঃ উভয় লিঙ্গ মিলিত হলে করণীয়, হা/ ২৯১। মুসলিম, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ পানি প্রবাহিত করার সম্পর্ক পানি নির্গত হওয়ার সাথে। হা/ ৩৪৮।
[29] মুসলিম, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ নারীর বীর্য নির্গত হলে গোসল ওয়াজিব হওয়ার বর্ণনা। হা/ ৩১১।
[30] বুখারী, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতী তওয়াফ ছাড়া হজ্জের যাবতীয় কাজ করবে।
[31] দারেমী, অধ্যায়ঃ তালাক, অনুচ্ছেদ নং৩ হা/ ২১৬৬। মুআত্বা মালেক অধ্যায়ঃ নামাযের জন্য আহবান হা/৪১৯।
[32] তিরমিযী, অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ অপবিত্র না হলে যে কোন অবস্থায় কুরআন পাঠ করা।
[33] বুখারী, অধ্যায়ঃ তায়াম্মুম, অনুচ্ছেদঃ পানির বদলে পবিত্র মাটিই মুসলিম ব্যক্তির ওযু। হা/ ৩৪৪।
[34] বুখারী, অধ্যায়ঃ তায়াম্মুম, অনুচ্ছেদঃ তায়াম্মুমকারী কি দু’হাতে ফুঁক দিবে। হা/ ৩৩৮।
[35] বুখারী, অধ্যায়ঃ ওযু, অনুচ্ছেদঃ শিশু পুত্রের পেশাব। হা/২২৩। মুসলিম, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ দুগ্ধপোষ্য শিশুর পেশাবের বিধান ও তা ধোয়ার পদ্ধতি। হা/ ২৮৬।
[36] আবুস্ সামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী  বলেন,

يُغْسَلُ مِنْ بَوْلِ الْجَارِيَةِ وَيُرَشُّ مِنْ بَوْلِ الْغُلَامِ 

“শিশু মেয়ের পেশাব ধৌত করতে হবে এবং শিশু ছেলের পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।” (নাসাঈ, আবু দাঊদ, ইবনু মাজাহ্)
[37] ছহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতীর ছিয়াম পরিত্যাগ করা। হা/ ৩০৪।
[38] ছহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ নামাযের সময়, হা/৫৪৫। মুসলিম, অধ্যায়ঃ মসজিদ ও নামাযের স্থান, অনুচ্ছেদঃ এক রাকাত নামায পেলে ঐ নামায পেয়ে গেল।
[39] বুখারী, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ হায়েযের দিন ছাড়া অন্য সময় হলুদ রং ও মেটে রংয়ের তরল পদার্থ বের হওয়া। হা/৩২৬।
[40] আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ পবিত্র হওয়ার পর নারী যদি হলুদ রং ও মেটে রংয়ের তরল পদার্থ বের হতে দেখে।
[41] আবু দাঊদ, ঐ
[42] বুখারী মুআল্লাকভাবে বর্ণনা করেন। অধ্যায়ঃ ঋতু, অনুচ্ছেদঃ মাসিক আগমণ ও নির্গমণ।
[43] ছহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ ঋতু, অনুচ্ছেদঃ নারীদের ঋতু হলে প্রয়োজনীয় নির্দেশ। মুসলিম, অধ্যায়ঃ হজ্জ, অনুচ্ছেদঃ ইহরামের পদ্ধতি বর্ণনা করা।
[44] কিন্তু উম্মু সালামা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর যুগে নেফাস বিশিষ্টি নারীগণ চল্লিশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন। [দ্র: ছহীহ তিরমিযী হা/১৩৯, ছহীহ আবু দাউদ হা/৩২৯, ছহীহ ইবনে মাজাহ্ হা/৬৪৮- আলবানী] অধিকাংশ বিদ্বান (সুফিয়ান ছাওরী, ইবনুল মোবারক, শাফেঈ, আহমাদ, ইসহাক প্রমুখ) এমতই পোষণ করেন যে, চল্লিশ দিনের পর স্রাব নির্গত হতে থাকলে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না। বরং গোসল করে নামায ইত্যাদি শুরু করবে। আর হাসান বাছরী বলেন, ৫০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। আর ৬০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা আত্বা ও শা’বী থেকে বর্ণিত আছে। (তিরমিযী- হা/১১৯)- অনুবাদক।

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button