প্রবন্ধ

গাজরের কি কি উপকারিতা ?

প্রবন্ধটি পড়া হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময়, অসীম দয়ালু।

গাজর স্বাদে অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং আঁশসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি, যা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। কাঁচা ও রান্না দু’ভাবেই এটি খাওয়া যায়। তরকারী ও সালাদ হিসাবেও গাজর অত্যন্ত জনপ্রিয়। গাজর অতি পুষ্টিমান সমৃদ্ধ সবজি। এতে উচ্চমানের বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। তবে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে উপকারটি হ’ল দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়া। এ ছাড়াও আছে আরও অনেক স্বাস্থ্যগত সুবিধা।

সালাদ অথবা সবজি কিংবা সামান্য লবণ মেখে এমনিতেই খাওয়া যায় গাজর। এ ছাড়া আছে গাজরের হালুয়া। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যদি গাজর থেকে সর্বোচ্চ পুষ্টিটা পেতে হয় তবে কাচা গাজর খাওয়াই সর্বোত্তম। তাই গাজরের জুস বানিয়ে খেলেই পাওয়া যাবে গাজরের সর্বোচ্চ পুষ্টি উপাদান। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গাজরের জুস স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে কয়েকগুণ। নিম্নে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকার সম্পর্কে আলোচনা করা হ’ল-

১. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক :

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে ভিটামিন ‘এ’ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। লাল-কমলা রঙের ফল-মূল অথবা সবজি যেমন গাজর, মিষ্টি কুমড়া এবং তরমুজে বেটা-ক্যারোটিন নামের এক ধরনের উপাদান থাকে। এই উপাদানটি শরীরে ভিটামিন ‘এ’-তে পরিণত হয়। আর এতেই শরীরের অন্যান্য স্বাস্থ্যগত উপকারের পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

২. ঠিক রাখে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট :

শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামক একটি উপাদানের কারণে বয়সের ছাপ চলে আসে। গাজরের মধ্যে যে ক্যারটিনয়েড থাকে তা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে বয়সের ছাপ আসার গতিকে ধীর করে। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে বিষমুক্ত করে, হৃদরোগ এবং ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে।

৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হয় :

হজম প্রক্রিয়া শেষে খাদ্যের যে উচ্ছিষ্টাংশগুলো আমাদের শরীরে থেকে সেগুলোকে ফ্রি র‌্যাডিকেলস বা মৌল বলে। এই ফ্রি র‌্যাডিকেলস শরীরের কিছু কোষ নষ্ট করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার এই ধরনের মৌলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। শরীরে ক্যান্সারের কোষ জন্ম নেওয়ার প্রবণতা কমে যায়। গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে ৩৩ শতাংশ ভিটামিন ‘এ’, ৯ শতাংশ ভিটামিন ‘সি’ এবং ৫ শতাংশ ভিটামিন ‘বি-৬’ পাওয়া যায়। এগুলো এক হয়ে ফ্রি র‌্যাডিকেলসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

৪. রোধ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি :

প্রতিদিন এক গ্লাস গাজরের জুস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আশ্চর্যজনকভাবে বৃদ্ধি করে। শরীরে ক্ষতিকর জীবাণু, ভাইরাস এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। গাজরের জুসে ভিটামিন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খনিজ, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি থাকে যা হাড় গঠন, নার্ভাস সিস্টেমকে শক্ত করা ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৫. হার্ট সবল রাখে :

একটি সুস্থ হার্টের জন্য শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং চাপ মুক্ত থাকাটা খুব দরকার। প্রয়োজন সঠিক খাদ্যতালিকার। গাজর ডায়েটরি ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ থাকে। এই উপাদানগুলো ধমনির ওপর কোন কিছুর আস্তর জমতে না দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। সুস্থ রাখে হার্টকে।

৬. ত্বকের শুষ্কতা দূর করে :

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজের উপস্থিতি আছে গাজরে। এই উপাদানগুলো ত্বককে রাখে সুস্থ এবং সতেজ। এসব পুষ্টি উপাদান ত্বক শুকিয়ে যাওয়া, স্কিন টোনকে উন্নত করা এবং ত্বকে দাগ পড়া থেকে রক্ষা করে।

৭. কোলেস্টরেল এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ :

কোলেস্টরেল এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও গাজরের জুস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গাজরের মধ্যে থাকা পটাশিয়ামই এর মূল কারণ। গাজরে ক্যালরি এবং সুগারের উপাদান খুবই কম। এ ছাড়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে যে সব ভিটামিন এবং খনিজের প্রয়োজন তাও বিদ্যমান। চর্বি কমাতে সাহায্য করে বলে ওজনও কমে। তাই চিকিৎসকেরা শরীরে পুষ্টির পরিমাণ বাড়াতে খাওয়ার আগে বা পড়ে এক গ্লাস গাজরের জুস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

মন্তব্য করুন

Loading Facebook Comments ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button